শেখ আবু তালেব: একটানা অব্যাহত রয়েছে পুঁজিবাজারের চাঙাভাব। আশাবাদী বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ শুরু করেছেন। প্রতিনিয়ত বাড়ছে শেয়ার ক্রয়ের চাপ। ক্রয় চাপে মৌলভিত্তির পাশাপাশি বৃদ্ধি পাচ্ছে দুর্বল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদরও। এজন্য গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ দর বৃদ্ধি দেখা গেছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারে। এ সময়ে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষে ছিল বিমা খাত।
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণে জানা গেছে এমন তথ্য। গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন বৃদ্ধির পাশাপাশি সবগুলো সূচকের উন্নয়ন হয়। খাতভিত্তিক শেয়ারদরে দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। আলোচিত সময়ে সর্বোচ্চ শেয়ারদর বৃদ্ধি দেখা গেছে খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতে ৯ দশমিক এক শতাংশ, সাধারণ বিমায় আট দশমিক ৯ শতাংশ, সিরামিকে আট দশমিক দুই শতাংশ।
অন্যদিকে আগের সপ্তাহের চেয়ে শেয়ারদর কমেছে আইটি খাতে তিন দশমিক চার শতাংশ, সেবা ও আবাসন খাতে এক দশমিক আট শতাংশ, টেলিকম খাতে এক দশমিক সাত শতাংশ।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের লেনদেন বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে আগের সপ্তাহের চেয়ে। দীর্ঘদিন থেকে ‘জেড’ ক্যাটেগরিতে থাকা কোম্পানি সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলের শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৪৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ; যা গত সপ্তাহে ডিএসইতে একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ। অথচ মৌলভিত্তির শেয়ার হিসেবে বিবেচিত ‘এ’ ক্যাটেগরিতে থাকা প্রভাতী ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৪৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।
একই চিত্র দেখা গেছে, সর্বোচ্চ শেয়ারদর বৃদ্ধির তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানেও উঠে এসেছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা বন্ধ থাকার পরও শেয়ারদর বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে ইউনাইটেড এয়ারের। গত সপ্তাহেও শেয়ারটির দর বৃদ্ধি হয় ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা ডিএসইতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
দীর্ঘদিন ধরেই পুঁজিবাজারে শেয়ারটির দর অভিহিত মূল্যের অনেক নিচে রয়েছে। এক টাকা ৩০ পয়সায় পাওয়া গিয়েছিল শেয়ারটি। সেখান থেকে দর বৃদ্ধি হয়ে দুই টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। দুই টাকায় কেনা শেয়ারটিও পুনরায় দেড় টাকায় নামে। দুই টাকা শেয়ারটি কিনেও অনেকে লোকসান গুনে। সেই শেয়ারটির দর উত্থান শুরু হয়েছে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ডিএসইতে গত সপ্তাহে মোট ৩৬২টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২১২টি, কমে ১১৯টির, অপরিবর্তিত ছিল ২৮টির ও লেনদেন হয়নি তিনটির। প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বৃদ্ধি পায় ৯৩ দশমিক ৩৬ পয়েন্ট। অন্য দুটি সূচকও বৃদ্ধি পায়।
করোনা মহামারিতে বন্ধ থাকার পর গত মে মাসে খুলেছে পুঁজিবাজার। এরপর থেকেই শেয়ারদর ঊর্ধ্বমুখি। চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর থেকেই বৃদ্ধি পেতে থাকে ডিএসইর সূচক ও লেনদেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বিনিয়োগকারীরা বাজারে প্রবেশ করছেন। এতে বেড়েছে শেয়ার ক্রয় প্রবণতা। মৌলভিত্তির কোম্পানির অনেক শেয়ারদরই এখন সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে। এজন্য অনেকেই পছন্দের শেয়ারে বিনিয়োগ করতে পারছেন না। সাময়িক মুনাফা তুলতে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে বিনিয়োগ শুরু করেছেন। এতে বেড়েছে ক্রয় চাপ।
এজন্য মৌলভিত্তির সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারের দর। শেয়ারদর ও লেনদেন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজার মূলধন এক সপ্তাহের মধ্যে বৃদ্ধি পায় ছয় হাজার ৬৯০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে ডিএসইতে সর্বোচ্চ গেইনারে ছিল খাদ্য খাতের শেয়ার। এ খাতের শেয়ারটি সর্বোচ্চ ৯ দশমিক এক শতাংশ গেইনার দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা। এছাড়া সাধারণ বিমা খাত আট দশমিক ৯ শতাংশ, সিরামিক খাত আট দশমিক দুই শতাংশ, আর্থিক খাত চার দশমিক ছয় শতাংশ, ব্যাংক ও পাট খাত তিন দশমিক ছয় শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ তিন দশমিক এক শতাংশ, বস্ত্র দুই দশমিক এক শতাংশ ও প্রকৌশল খাত এক দশমিক সাত শতাংশ অবদান রাখে।
ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বিমা খাত। এছাড়া ওষুধ খাত ১৪ শতাংশ, প্রকৌশল খাত ১১ দশমিক তিন শতাংশ, ব্যাংক ১১ দশমিক এক শতাংশ ও বস্ত্র খাত আট দশমিক ছয় শতাংশ অবদান রাখে।
একক কোম্পানি হিসেবে ডিএসইতে গত সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষ দশটিতে উঠে আসে প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স। এছাড়া শীর্ষ দশে স্থান করে নেয় নিটল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, এশিয়া প্যাসিফিক জেনারেল ইন্স্যুরেন্স, এশিয়া ইন্স্যুরেন্স, জনতা ইন্স্যুরেন্স, গ্লোবাল ইন্স্যুরেন্স, মুন্নু সিরামিক, সিটি ব্যাংক ও রুপালি ইন্স্যুরেন্স। অন্যদিকে শেয়ারদর হারানোর শীর্ষ তালিকায় ছিল শ্যামপুর সুগার মিলস, হাক্কানী পাল্প অ্যান্ড পেপার, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ, ফাইন ফুডস, ফু-ওয়াং ফুড, আজিজ পাইপস, এডিএন টেলিকম ও সিনোবাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।