নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের (ডিএনসিআরপি) পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেছেন, রাতে বাজারে যে মুরগিটা আসে, সেটির ক্রয় রসিদে আমরা কিছু অনিয়ম পেয়েছি। ক্রয় রসিদের গরমিলে বাড়ানো হচ্ছে মুরগির দাম। তিনি বলেন, অচিরেই রাতের বেলায় বাজার তদারকির জন্য ভোক্তা অধিকার থেকে টিম কাজ করবে। ব্যবসায়ীদের জন্য সতর্কবাণী থাকবে। মুরগির ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মাঝে বেশি গরমিল থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। গতকাল শুক্রবার কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকারের পরিদর্শন শেষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ভোক্তারা দুই ধরনের পণ্য কিনে থাকেন। মুদিপণ্য ও কাঁচা সবজি। মুদি পণ্যের ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বাজার স্থিতিশীল রয়েছে, তেলের দাম কমতির দিকে রয়েছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছিল, মুরগির দাম ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা পড়বে। তাহলে খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২১০ টাকা দাম পড়তে পারে। কিন্তু আজ বাজারে দেখলাম কোনো ব্যবসায়ী মুরগির কেজি ২১৫ টাকায় বিক্রি করছেন। তাদের রশিদে ক্রয়মূল্য দেখানো হয়েছে ১৯২ থেকে ১৯৩ টাকা।
তিনি বলেন, তবে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, মুরগির দাম খুব বেশি কমলে খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্তমানে খামারে মুরগির উৎপাদন খরচ ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকার মধ্যে। আমরা চাই উৎপাদন যেন ব্যাহত না হয়।
ডিএনসিআরপি পরিচালক বলেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বাস মালিক ও কসমেটিকস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের মিটিং রয়েছে। কসেমটিকস পণ্যের দাম যদি বেশি রাখা হয়, তাহলে সে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। আর বাস মালিকদের প্রতি নির্দেশনা থাকবে ঈদযাত্রায় সঠিক ভাড়া যেন তারা নিশ্চিত করেন।
অন্যদিকে বাজারভেদে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহেই ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৭০ টাকায়। দাম কমলেও আশানুরূপ ক্রেতা পাচ্ছে না বিক্রেতারা। তারা বলছেন, দাম কমার পরও মাসের শেষ সময় হওয়ার ক্রেতাদের সংখ্যা কিছুটা কম।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাস আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০ থেকে ২৩০ টাকা। সেই হিসাব অনুযায়ী গত এক মাসে ব্রয়লারের দাম কমেছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ঠিক এক বছর আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২১০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে ব্রয়লার মুরগি। পাশাপাশি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩৩০ টাকায়। তবে সাইজে বড় সোনালি মুরগি প্রতি কেজিতে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লেয়ার মুরগি প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে লাল ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আগের মতোই গরুর মাংস বাড়তি দামে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংস মানভেদে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির দাম কমলেও ক্রেতা কম থাকার বিষয়ে গুলশান লেকপাড়-সংলগ্ন বাজারের মুরগি বিক্রেতা হায়দার আলী বলেন, গত সপ্তাহ ও এর আগে যখন ব্রয়লারের দাম বাড়ল, মূলত তখন থেকেই ক্রেতা কিছুটা কমেছে। বলতে গেলে তখন থেকেই দোকানগুলো অনেকটা ফাঁকা থাকত। এরপর গত সপ্তাহে রমজান শুরু হওয়ায় ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছিল। তবে এখন ক্রেতার সংখ্যা আবার কম। এর কারণ হলো এখন মাসের শেষ সময়, হাতে সবার টাকা কম। আবার যখন সবাই বেতন পাবে তখন ক্রেতার সংখ্যা বাড়বে।