ক্রস-বর্ডার বাণিজ্য সংলাপে বক্তারা: ভারত-চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম নয় বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:পরিবেশবান্ধব শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সীমান্তের ঊর্ধ্বে ভাবতে হবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে। সীমান্তের ওপর দিয়ে জ্বালানি, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির আদান প্রদান করতে হবে। এক্ষেত্রে চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সুষম অবস্থা প্রয়োজন। কিন্তু, এক্ষেত্রে সুষম পরিবেশ না থাকায় বাংলাদেশ এখনও প্রতিযোগী সক্ষম নয়। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিসিসিআই) উদ্যোগে আয়োজিত ক্রস-বর্ডার বিজনেস সংলাপে এ কথা বলেন বক্তারা।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিড) এক্সপো অংশ হিসেবে এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ববাণিজ্যে সম্ভাবনাময় অবস্থানে রয়েছে। চীন ও ভারতের মতো বড় অর্থনীতির পাশে থাকায় বাংলাদেশ অনেক সুবিধা পাচ্ছে। তবে এ সুযোগকে ব্যবহার করা প্রয়োজন। এজন্য নৌপথ, স্থলপথ ও আকাশপথ উম্মুক্ত করা দরকার। তবে, পণ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধাগুলো নির্বিঘ্ন করা দরকার।
বিসিসিসিআইর সভাপতি গোলাম দস্তগীর গাজীর সভাপতিত্বে সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশে ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (বিস) চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ, সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ভারতীয় গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের প্রিন্সিপাল কাউন্সিলর এম আনন্দ, বেপজার সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ব্রি জে এ মফিজুর রহমান, সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান ও বিড-এক্সপোর মুখ্য উপদেষ্টা দিলদার আহমেদ তারিক বক্তব্য রাখেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আন্তঃদেশীয় বাণিজ্যের জন্য পণ্যের মানের বিষয়ে রেগুলেশন দরকার। একই সঙ্গে উদ্ভাবনের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চীনের আজকের অগ্রগতির মূলে রয়েছে উদ্ভাবন। এ নিয়ে দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য বাণিজ্যবান্ধব কূটনীতি প্রয়োজন। শত্রু-শত্রু খেলা বন্ধ করতে হবে।
সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বাণিজ্যের জন্য সীমা উম্মুক্ত করা দরকার। কিন্তু, সেজন্য যে সক্ষমতা দরকার তা বাংলাদেশের নেই। গ্রিন জ্বালানি নিয়ে যে আলোচনা চলছে তা এখনও স্লোগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে তিনি মত দেন।
সাবেক মন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া বলেন, মুক্তবাণিজ্য আশার কথা। কিন্তু, পাট পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের মাধ্যমে মুক্তবাণিজ্যে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। এজন্য সুষম বাণিজ্যের পরিবেশ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ভারত ও চীনের সমান আকারের দেশ নয় বাংলাদেশ। তবে প্রতিযোগিতায় আমরা সমান হতে চাই। চীন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এজন্য চীন ও ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। পশ্চিমা বিশ্বের চেয়েও চীন-ভারতে বাণিজ্য বেশি লাভজনক হতে পারে বাংলাদেশের জন্য। তিনি সবুজ শিল্পায়নের বিষয়ে বলেন, শিল্পে সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে অনেক জায়গা প্রয়োজন হয় যা আমাদের নেই। কিন্তু, গৃহস্থালিতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহারে বাংলাদেশ বিশ্বে প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম দস্তগীর গাজী বলেন, দেশের উত্তরাঞ্চলে ও পাহাড়ি অঞ্চলে শতভাগ সৌর বিদ্যুতায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটা বিরাট সাফল্য। আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য বিকাশের মাধ্যমে জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে আরও অগ্রগতি অর্জন সম্ভব।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আঞ্চলিক পর্যায়ে এখন কৌশলগত সহযোগিতার দিকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে যোগাযোগ (কানেকটিভিটি) হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বাংলাদেশ-চায়না চেম্বারের সহ-সভাপতি ব্রি জে শাহ সুলতান বলেন, দেশের ভেতরে ও বাইরে রেল ও সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। এখনকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্রস-বর্ডার বাণিজ্যের প্রয়োজন পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়। বিসের চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, লড়াইয়ের সুযোগ নেই। এখন প্রতিযোগিতার সময়।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০