Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:52 pm

ক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য দরকার পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে আনুষ্ঠানিক খাতে ‘ক্রাউডফান্ডিং’-এর ব্যবহার তেমন একটা নেই। কিন্তু অনানুষ্ঠানিক খাতে অনেক আগে থেকেই এর ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে ক্রাউডফান্ডিংয়ের বড় ধরনের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে এজন্য সবার আগে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করা দরকার এবং এই তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করছেন তারা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিং এবং এর ব্যবহার’ শীর্ষক ওই গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসএম মনিরুজ্জামান।
ক্রাউডফান্ডিং হলো বিকল্প এক ধরনের অর্থায়ন ব্যবস্থা। এ ব্যবস্থায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি তহবিল গঠন করা হয়। ওই তহবিল থেকে আবার বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করা হয়। এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন ও ব্লগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দেন আলোচকরা।
এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, প্রকল্পের শুরুতে অর্থায়ন ঘাটতি মেটাতে ক্রাউডফান্ডিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে এ ধরনের অর্থায়নে কিছু ঝুঁকি ও সমস্যা রয়েছে। এমনকি ক্রাউডফান্ডিং পোর্টালে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্রাউডফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে মূল বিষয় বিশ্বস্ততা, যা খুব সহজে অর্জন করা সম্ভব নয়। এখনও এ বিষয়ে কোনো রেগুলেশন তৈরি করা হয়নি। তবে এখনই উপযুক্ত সময় ক্রাউডফান্ডিং বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো।
আলোচকদের মতে, ক্রাউডফান্ডিংয়ের মূল ভিত্তি হলো বিশ্বস্ততা, কিন্তু এক দিনে এ বিশ্বস্ততা অর্জন করা সম্ভব নয়। কোনো কারণে বিশ্বস্ততা খর্ব হলে এ ধরনের তহবিল সংগ্রহ হোঁচট খেতে পারে।
বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, অনানুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ে ক্রাউডফান্ডিং একটি পুরোনো অর্থায়ন ব্যবস্থা। আহছানিয়া মিশন ও কিডনি ফাউন্ডেশন এর বড় উদাহরণ। এটি প্রাতিষ্ঠানিক খাতে ব্যবহার করার বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক মহা. নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘ভবিষ্যতে ক্রাউডফান্ডিং ব্যাংক তহবিলের একটি উৎস হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। উন্নত দেশগুলো অনেক দক্ষতার সঙ্গে এই উৎসটি ব্যবহার করে বহু প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনা সফলতার সঙ্গে নির্মাণ করেছে। এমনকি বাংলাদেশেও কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যয়ন করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করে ব্যাংকের আস্থা অর্জন এবং গ্রাহক সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই বিষয়টি বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।’
বৈঠকে ব্যাংক খাতে ক্রাউডফান্ডিংয়ের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বক্তব্য দেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ক্রাউডফান্ডিংয়ের মতো নতুন অর্থায়ন ব্যবস্থা যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সেদিকে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিশেষ নজর দিতে হবে। বাংলাদেশে ক্রাউডফান্ডিংয়ের অনেক ভালো উদাহরণ রয়েছে। তবে সাবধান থাকতে হবে এর অপব্যবহার যাতে না হয়। এজন্য সঠিক নীতিমালা প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের সাবেক সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ক্রাউডফান্ডিং একটি ভালো উদ্যোগ, তবে কেউ যাতে অপব্যবহারের সুযোগ না পায়, সে বিষয়টি নজরে রাখতে হবে। আইন করে শুধু অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ রাখতে হবে।