ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম নরেন্দ্রপুর

 

কাজী আশরাফুল আজাদ:  বাড়ির ছাদ, উঠান, পাশের বাগান সব জায়গায় ক্রিকেট ব্যাট রাখা। আছে ব্যাট তৈরির নানা উপকরণও। চিত্রটি যশোরের নরেন্দ্রপুর গ্রামের মহাজেরপাড়ার তরিকুল ইসলামের বাড়ির। তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রায় ছয় বছর ধরে ক্রিকেট ব্যাট তৈরি করছেন।

সাধারণত আমড়া, পিতেগড়া, জীবন, কুয়ো, নিমভূত গাছের কাঠ দিয়ে ব্যাট তৈরি হয়ে থাকে। ছয় থেকে সাত ধরনের ব্যাট তৈরি করেন তরিকুল ও তার পরিবার। বর্তমানে তার পরিবারের চারজনের সঙ্গে আরও চার শ্রমিক ব্যাট তৈরি করছেন। একেকটি ব্যাটের পাইকারি মূল্য ১৫ থেকে ১২০ টাকা। দেশের সব জেলা থেকে তিনি ব্যাট তৈরির অর্ডার পান। বেশিরভাগ ব্যাট বিক্রি হয় বগুড়া ও চট্টগ্রামে। কাঠ সাইজ করার পর স্টিকার, টেপ, রিং টেপ, গ্রিফার, রঙ, পলিথিন প্রভৃতি দিয়ে একটি ব্যাট বিক্রির উপযোগী করা হয়। বর্তমানে মোবাইল ফোনে অর্ডার পেয়ে ব্যাট তৈরি করে ক্রেতার কাছে পাঠান তারা।

শুধু তরিকুল ইসলামই নন, ওই গ্রামের মহাজেরপাড়া ও মিস্ত্রিপাড়ার ৩৫ থেকে ৪০টি বাড়িতে হাজার হাজার ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়। তাদের তৈরি ব্যাট বিক্রির জন্য চলে যায় দেশের প্রায় সব জেলায়। নরেন্দ্রপুরের কয়েকশ মানুষ প্রায় ২৫ বছর ধরে ব্যাট তৈরির পেশায় জড়িত। সঙ্গত কারণে নরেন্দ্রপুর গ্রামটি ক্রিকেট ব্যাটের গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

তরিকুল জানান, ‘এ ব্যবসা করে কোনোরকমে টিকে আছি। প্রায় ছয় লাখ টাকা পুঁজি লাগে। এত টাকা আমার নেই। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করি। কাঠ কিনে ব্যাট বানিয়ে কাঠ ব্যবসায়ীর টাকা পরিশোধ করি। বর্তমানে কাঠের দামও বেড়ে গেছে। কিন্তু ব্যাটের দাম বাড়াতে গেলে বিক্রির ঝামেলায় পড়ি।’ তিনি আরও জানান, এখন প্রতিযোগিতা বেশি। ফলে ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে ব্যাট কিনে থাকেন।

আগে ব্যাট তৈরির উপকরণ ঢাকা থেকে আনতে হতো। এখন কাছের রূপদিয়া বাজারে উপকরণগুলো পাওয়া যায়। সুবিধা বলতে এটুকুই। তাছাড়া বর্ষাকালে ব্যাট চলে কম। সে সময় ব্যবসায় ভাটা পড়ে। পৌষ থেকে বৈশাখ ব্যবসার উপযুক্ত সময়।

তরিকুলের মতো ওই গ্রামের পলাশ মজুমদার, পাপন শেখ, রতন ঘোষ, মনিরুল ইসলাম, ওমর আলী, ইয়ার আলী, নূর মোহাম্মদ, শরিফুল ইসলাম, আশরাফুল হোসেন, গৌরাঙ্গ রায়, সমীর সমাদ্দার, তাজউদ্দিন, নিজাম উদ্দিন, সুবল কুমার, স্বপন সেনসহ অনেকে ব্যাট তৈরি করেন।

কথা হয় আরেক ব্যাট ব্যবসায়ী পলাশ মজুমদারের সঙ্গে। তিনি একসময় গরুর গাড়ির চাকা তৈরি করতেন। ওই চাকার প্রয়োজন ফুরিয়ে  গেছে গরুর গাড়ি এখন বিলুপ্তপ্রায়। ফলে ব্যবসার ধরন বদলাতে হয়েছে। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে তার কাকা সঞ্জিত মজুমদার ব্যাট তৈরি শুরু করেন। সে সময় যশোর শহরের দড়াটানায় একজন খেলনা বিক্রেতার কাছে একটি ছোট সাইজের ব্যাট তৈরি করে নিয়ে যান। সেটি বিক্রি হওয়ার পর ওই দোকান থেকে আরও বেশ কিছু ব্যাটের অর্ডার পান। তখন থেকে তিনি নিয়মিত ব্যাট তৈরি করে আসছেন। ধীরে ধীরে দেশের নানা জেলার ব্যবসায়ীরা ব্যাট তৈরির অর্ডার দিতে থাকেন। তখন তিনি একচেটিয়া ব্যবসা করেন। পরে তার দেখাদেখি আরও অনেকে ব্যাট তৈরির ব্যবসায় আসেন।

পলাশ মজুমদার আরও জানান, তিনি ১৫ থেকে আড়াইশ টাকা দামের ব্যাট তৈরি করে থাকেন। দেশের প্রায় সব জেলায় বিক্রি হয় তাদের ব্যাট। তার বাড়িও ক্রিকেট ব্যাটে ভর্তি। তার মতে, কাঠের দাম কম। তবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ ব্যবসার প্রসার ঘটানো সম্ভব।

যশোরের বাইরে খুলনা ও মেহেরপুরের কিছু এলাকা এবং ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরেও ক্রিকেট ব্যাট তৈরি হয়।

যশোর

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০