শেয়ার বিজ ডেস্ক: সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার থেকে বিলিয়ন ডলার মূল্যের ক্রিপ্টোকারেন্সি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণদান ও ট্রেডিং কোম্পানিগুলো তারল্য সংকটের সম্মুখীন হচ্ছে এবং উন্নত দেশগুলোর অনেক প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা করেছে। খবর: রয়টার্স।
সিঙ্গাপুরের ক্রিপ্টো ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ভল্ড গতকাল সোমবার তাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে সব লেনদেন প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ট্রেডিং ও আমানত বন্ধ করে দিয়েছে। সমস্যা সমাধান ও সম্ভাব্য পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে বলে এক বিবৃতিতে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
ভল্ডের সিইও দর্শন বাথিজা গতকাল একটি ব্লগ পোস্টে জানান, বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতির জন্য তাদের প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের মূল ব্যবসায়িক অংশীদারদের আর্থিক সমস্যাগুলো আমাদেরও প্রভাবিত করছে। গত ১২ জুন থেকে এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ১৯৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, তহবিল পুনর্গঠনের সম্ভাব্য সব বিকল্প নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি এজন্য আইনি উপদেষ্টাদের সঙ্গে কাজ করছে এবং স্টেকহোল্ডার বা অংশীজনদের স্বার্থকে রক্ষার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ভল্ড জানায়, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সমস্যা সমাধানের জন্য ভল্ড এরই মধ্যে ক্রোল পিটিই লিমিটেডকে তাদের আর্থিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
ভল্ডের মতো অন্য ক্রিপ্টো ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও তারল্য সংকটে রয়েছে। এমন একটি প্রতিষ্ঠান সেলসিয়াস। প্রতিষ্ঠানটি গত মাসে গ্রাহকদের জন্য তহবিল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। চলতি মাসে ২০২০ সালের ডিসেম্বরের পর প্রথমবারের মতো সবচেয়ে চালু ও জনপ্রিয় বিটকয়েনের মূল্য ২০ হাজার মার্কিন ডলারের নিচে নামে। এ হিসাবে গত ১৮ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয় ডিজিটাল মুদ্রাটির। ক্রিপ্টো মুদ্রা ইথিরিয়াম, সোলানা ও বিএনবিও ব্যাপক ধসের সম্মুখীন হয়েছে। বিটকয়েনের পর সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথিরিয়াম। এই মুদ্রার বাজারদর এখন এক হাজারের ঘরে। এটিও চলতি বছর ৭৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
২০২১ সালের জানুয়ারির পর থেকে প্রথমবারের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির সামগ্রিক বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এই ধসের ফলে বিরাট ক্ষতিতে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধসের জেরে কার্যত দিশাহারা বিনিয়োগকারীরা। কেউ কেউ বলছেন, এই ধস আগামী দিনে আরও বড় আকার নিতে পারে। ভল্ডের ঘোষণা যেন তারই প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের পতন পুঁজিবাজার ও অন্যান্য সম্পদের দামের পতনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ ব্যংকের বা ফেডের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আর্থিক নীতিকে ক্রমেই কঠোর করে চলেছে।
অনেকে বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে নানা শ্রেণির মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে কোনো মৌলিক নীতি নেই। পুঁজিবাজারের তুলনায় ব্যাপক অস্থিরতা কাজ করে এখানে। ফলে বাবেল তৈরি হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেন্দ্র করে, যা ফেটে যেতেই এমন ভয়াবহ পতন।
অন্যদিকে ক্রিপ্টো বিনিয়োগকারীদের অনেকের অভিমত, বিটকয়েন কিংবা ইথিরিয়ামের দাম প্রচুর ওঠা-নামা করে এবং একসময় সর্বোচ্চ দামে গিয়ে পৌঁছায়, যা ভালো অঙ্কের মুনাফা তৈরি করে দেয়। তাই তারা মনে করেন, এটি বিনিয়োগ করার ভালো সময় এবং এই পতন থেকে শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বাজার। বিনিয়োগকারীদের অনেকে এও বলেন, মৌলিক নীতি না থাকায় কখনও একটি কারেন্সি সেই উচ্চতা লাভ করতে পারে না। তাই সাময়িক সময়ের জন্য কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যৎ এখনও অন্ধকার।