নিজস্ব প্রতিবেদক: তরুণ প্রজন্মের সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তি ঠেকানোর পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য ভিন্নভাবে মূল্য নির্ধারণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)।
গতকাল রোববার বিটিআরসির সম্মেলন কক্ষে ‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে টেলিযোগাযোগ সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সংস্থাটির চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ ইন্টারনেটে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে ডিজিটাল আফিম আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ইন্টারনেট ব্যবহারে দুটি ক্যাটেগরি করা উচিত। ফেসবুকের জন্য এক রেট, ক্রিয়েটিভ ইন্টারনেটের জন্য আরেক রেট। অর্থাৎ যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত, শিক্ষা, পরামর্শ, আউট সোর্সিং এ ধরনের কাজের জন্য আলাদা রেট করা হলে ভালো হবে।’
তিনি বলেন, ‘এটা অনস্বীকার্য যে, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সবার হাতে হাতে পৌঁছে গেছে। দুঃখের বিষয় হলো, মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ঘাঁটাটায় (ব্রাউজ) প্র্যাকটিক্যালি ইয়ংগার জেনারেশনে খুব একটা ক্রিয়েটিভ হচ্ছে না। আজকে আমি দেখেছি, ইয়ংগার জেনারেশনের ভেতরে ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করে ফেসবুক চ্যাটিং করার জন্য। এটি কিন্তু ক্রিয়েটিভ ইউজ না।’
তিনি আরও বলেন, ফেসবুক ব্যবহার একটি নেশা। “এটি ‘ডিজিটাল কোকেন’ অ্যাডিকশনের মতো হয়ে গেছে। আজকাল ইয়ংগার জেনারেশন একবার ফেসবুকের মধ্যে ঢুকলে আর বের হতে চায় না।”
তরুণদের ইন্টারনেটে ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত আসক্তি বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে হতাশা থেকে শুরু করে ঘুম কম হওয়াসহ নানা অসুস্থতার জন্যও একে দায়ী করা হচ্ছে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ‘সামাজিক বিপ্লব’ দরকার মন্তব্য করার সঙ্গে নিজের সংস্থার পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
‘খুব শিগগিরই প্রস্তাব করব যে যাতে ইন্টারনেটে ক্রিয়েটিভ ইউজের জন্য কোনো বন্দোবস্ত করা যায়। কোনো একটা বিশেষ রেইট দেওয়া যায় ফেসবুক ব্যবহারের জন্য, আবার ক্রিয়েটিভ ইউজ যদি করা যায়, তাহলে আরেক রকমের রেইট। তাহলে হয়তোবা ফেসবুক ব্যবহার না করে নলেজ আহরণের জন্য চেষ্টা করবে।’
ইন্টারনেট নিরাপদ করতে বিটিআরসি নানা উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও জানান শাহজাহান মাহমুদ।
‘আমরা ইন্টারনেট প্রসারের ব্যাপারে চেষ্টা করে যাই, মাইলের পর মাইল ফাইবার অপটিক নিয়ে যাচ্ছি, তবে নিরাপত্তার দিকে তেমন নজর দেওয়া হচ্ছে না। এসব নতুন নতুন বিষয়ে জনগণকে আরও নিরাপত্তা দিতে বিটিআরসিতে ল্যাব প্রতিষ্ঠা করতে সরকারের কাছে প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করছি, সরকার অনুমোদন দেবে। ল্যাব প্রতিষ্ঠা হলে আমরা জনগণের হাতে কোনো সেবা প্রদানের আগে নিজেরা পরীক্ষা-নীরিক্ষা করব। সেবার মান সম্পর্কে জানতে পারব কোনটি ভালো, কোনটি খারাপ।’
‘স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে টেলিযোগাযোগ সেক্টরের ভূমিকা’ শীর্ষক এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিটিআরসি চেয়ারম্যান এই খাতে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার ওপর জোর দেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার, বিশেষ অতিথি ছিলেন টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পড়ে শোনান টেলিযোগাযোগ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিটিআরসি সচিব মো. সরওয়ার আলমের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা আলম এবং অ্যামটব মহাসচিব টিআইএম নুরুল কবিরও বক্তব্য রাখেন।