Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 5:18 pm

ক্রেডিট কার্ডেও খেলাপি বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসায়িক গ্রুপ বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান আলমগীর। তিনি সিটি ব্যাংকের একজন ক্রেডিট কার্ডের গ্রাহক। বর্তমানে তিনি ক্রেডিট কার্ডের খেলাপি গ্রাহক, যদিও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণও আগেই খেলাপি ঋণে পরিণত হয়। খেলাপি মামলায় সম্প্রতি ফেরদৌসকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। তার মালিকানাধীন বাগদাদ গ্রুপ বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা খেলাপি রয়েছে।

জানা যায়, ব্যক্তিগত খরচ ও ব্যবহারের জন্য সিটি ব্যাংক থেকে ক্রেডিট কার্ড নেন বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান আলমগীর। তিনি ২০১৯ সালে খেলাপি হয়ে পড়েন। বর্তমানে তার কাছে ব্যাংকটির পাওনা ১০ লাখ ৫২ হাজার ৩৩৬ টাকা। পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম অর্খঋণ আদালতে মামলা করেছে। মামলাটি আদালতে চলমান। এছাড়া একই ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে তিনি বাগদাদ গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাগদাদ এন্টারপ্রাইজের নামে ১৭ কোটি টাকা ঋণ নেন। ঋণের পাওনা নিয়মিত পরিশোধ না করায় খেলাপি হয়ে পড়েন। এ টাকা আদায়ে ২০১২ সালে অর্থঋণ আদালতে মামলা দায়ের করে ব্যাংকটি। এ মামলায় খেলাপি পাওনা আদায়ে গ্রেপ্তারি পাওনা জারি অর্থঋণ আদালত। কিন্তু দীর্ঘসময় ধরে তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন।

গত ৩ নভেম্বর অন্য একটি মামলায় তিনি হাজিরা দিতে আসেন। ওইদিন নগরীর লালদিঘি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে আদালতে পাঠানো হয়। বর্তমানে বাগদাদ এন্টারপ্রাইজের নামে নেয়া ঋণ বর্তমানে সুদে-আসলে ৩৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অপরদিকে ফনিক্স ফাইন্স্যাসের এক মামলায় ২০১৯ সালের আগস্টে কানাডা থেকে দেশে ফিরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন ফেরদৌস খানের স্ত্রী মেহেরুন নেছা। পরে জামিন নিয়ে আবারও কানাডায় চলে যান। তার বিরুদ্ধেও খেলাপি ঋণের ১৫টি মামলা রয়েছে।

জানা যায়, বাগদাদ গ্রুপের কর্ণধার চট্টগ্রামের রাউজানের ফেরদৌস খান আলমগীর। চট্টগ্রামের মাঝির ঘাটে সারের ব্যবসা থেকে একপর্যায়ে ভোগ্যপণ্যের ব্যবসায় আসেন তিন সহোদর ফেরদৌস খান আলমগীর, তানভীর খান আলমগীর ও আজাদ খান আলমগীর।

এর মধ্যে ফেরদৌস খান আলমগীর ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিরও পরিচালক। পরে মৎস্য আহরণ, আবাসন, পরিবহনসহ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলেন তারা। এরপর বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক ঋণসুবিধা নেন। প্রথমে ভালো লেনদেন করলেও পরে ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে গড়িমসি করেন। একপর্যায়ে ব্যাংকগুলোর মোটা অঙ্কের পাওনা আটকে যায়। এর মধ্যে রয়েছে ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৫৫ কোটি টাকা, রূপালী ব্যাংকের ৪৬ কোটি, সিটি ব্যাংকের ৩৩ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে ৩৩ কোটি ৫৭ লাখ, ব্যাংক এশিয়ার ১২ কোটি ও সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকা। এছাড়া আরও কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের টাকা আটকে আছে প্রতিষ্ঠানটির কাছে। এসব খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চেক প্রত্যাখ্যান ও অর্থঋণ আদালতে ৫০টির  বেশি মামলা করে। এসব মামলায় আদালত ১০টির বেশি গ্রেপ্তারি পারোয়ানা জারি করে। এদিকে গত কয়েক বছরে বাগদাদ গ্রুপের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিলাসবহুল মার্সিডিজ বাসগুলো অকেজো হয়ে গ্যারেজে পড়ে রয়েছে।

এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের আইন কর্মকর্তারা বলেন, বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান ফেরদৌস খান আলমগীর আগে ব্যবসায়িক ঋণে খেলাপি হয়েছেন। এরপর ক্রেডিট কার্ডেও খেলাপি। যদিও গত ৩ নভেম্বর সিটি ব্যাংকের ২০১২ সালে করা মামলায় ঋণখেলাপি ও বাগদাদ গ্রুপের চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তার মালিকানাধীন বাগদাদ এস্টারপ্রাইজের কাছে আদালতের রায়ে আসল ১৭ কোটি চার লাখ টাকা পাওনা। আর আমাদের সুদাসলসহ মোট খেলাপি পাওনা ৩৩ কোটি টাকা। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডেও সাড়ে ১০ লাখ টাকা খেলাপি। এটারও মামলা অর্থঋণ আদালতে বিচারাধীন।