ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের সবচেয়ে বেশি খরচ ভারতে

নিজস্ব প্রতিবেদক: একসময় ব্যাংকে টাকার সব লেনদেনে ব্যবহার হতো চেক। তবে মানুষ এখন চেক ছেড়ে ব্যাংক কার্ডে ঝুঁকছে। বর্তমানে কেনাকাটা ও বিদেশ ভ্রমণে নগদ টাকার পাশাপাশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ করার প্রবণতা দেশের মানুষের মধ্যে বাড়ছে। এ প্রবণতায় বাংলাদেশিরা প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করেন। গত মে মাসে ৮২ কোটি টাকা খরচ করে দেশটিতে বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, একক দেশ হিসেবে ভারতেই ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি খরচ করেন বাংলাদেশিরা। বস্তুত, দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে মোট খরচের চার ভাগের এক ভাগ হয় ভারতে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় মে মাসে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এ লেনদেনে বাংলাদেশি ব্যবহারকারীর পাশাপাশি রয়েছে বিদেশিরাও। গত মে মাসে দেশে ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ দুই হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা, যা এপ্রিলে ছিল দুই হাজার ৫২৯ কোটি টাকা।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, মে মাসে দেশের বাইরে লেনদেনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে ভারতে। এর পরিমাণ ১৭ দশমিক ০১ শতাংশ, অর্থের হিসাবে যা ৮২ কোটি টাকা। ভারতের পর বাংলাদেশিরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বেশি খরচ করেন বলে দেখা গেছে, যার পরিমাণ ৭১ কোটি বা ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। সৌদি আরবে ১৩ দশমিক ১৪, থাইল্যান্ডে ৮ দশমিক ২৯, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৭ দশমিক ৫৭, সিঙ্গাপুরে ৬ দশমিক ২৯, যুক্তরাজ্যে ৫ দশমিক ৮২, কানাডা ৪ দশমিক ৭৮, মালয়েশিয়ায় ৩ দশমিক ৬০, নেদারল্যান্ডসে ২ দশমিক ৮৮, অস্ট্রেলিয়ায় ২ দশমিক ২৮, আয়ারল্যান্ডে ২ দশমিক ১৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

বিদেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়েছে ভিসা কার্ড। এরপর ব্যবহƒত হয়েছে যথাক্রমে মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স কার্ড, ডাইনারস কার্ড, ইউনিয়ন পে ও জেসিবি কার্ড।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে দেশের বাইরে ক্রেডিট কার্ডে ৪৮৪ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে, যা আগের মাসের চেয়ে ৩১ শতাংশ ৫৭ শতাংশ বেশি।

ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহারের ধরন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মে মাসে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয়েছে দেশের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। মোট ক্রেডিট কার্ড লেনদেনে এর পরিমাণ ৫৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। এছাড়া ১৩ দশমিক ৭০ শতাংশ লেনদেন হয়েছে অর্থ স্থানান্তরের (ফান্ড ট্রান্সফার) ক্ষেত্রে। নগদ অর্থ উত্তোলনে ৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ইউটিলিটি বিল পরিশোধে ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ওষুধ ও ফার্মেসিতে ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ, পোশাক কেনাকাটায় ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ, ট্রান্সপোর্টেশনে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ, ব্যবসা সেবায় ২ শতাংশ ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন হয়েছে।

মে মাসে দেশের ভেতরে বিদেশি নাগরিকরাও তাদের ক্রেডিট কার্ড সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটায়। এর পরিমাণ ১৯৯ কোটি টাকা বা ৪১ দশমিক ০৬ শতাংশ।

মে মাসের তথ্যে দেখা যায়, দেশে সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা তাদের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেছেন, যার পরিমাণ ৫৩ কোটি টাকা বা ২৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এর পরেই রয়েছে যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা, তাদের ক্রেডিট কার্ডে লেনদেনের পরিমাণ ২৪ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ, ভারতীয় ১০ দশমিক ২১, সিঙ্গাপুরের ৩ দশমিক ৯৭, কানাডীয় ৩ দশমিক ৮৬, হংকং ৩ দশমিক ৬৪ এবং অস্ট্রেলীয় নাগরিক ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। এছাড়া  জাপানিজ ৩ দশমিক ৩৯ শতাংশ, চীনা নাগরিক ৩ দশমিক ০৫, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২ দশমিক ৮২, দক্ষিণ কোরিয়ার ২ দশমিক ২১ এবং জার্মানির ২ দশমিক ২১ শতাংশ ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার হয়েছে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা জানান, গত বছর বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ লাখের বেশি ভারতীয় ভিসা দেয়া হয়েছিল, যা ভিসা দেয়ার ক্ষেত্রে সারাবিশ্বে রেকর্ড।

ভিসা কেন্দ্রের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ চলছে, এ কথা জানিয়ে ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, দ্রুত ও সহজে ভারতীয় ভিসা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশিরা মূলত চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য ভারতে বেশি যান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০