ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার দাবি যাত্রী কল্যাণ সমিতির

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার বিধান দ্রুত চালুর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সে অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা দেয়ারও দাবি করেছে সংগঠনটি। আজ ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস, ২০২২’ উপলক্ষে গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। এতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সক্রিয় করারও দাবি করেন যাত্রী কল্যাণ সমিতি মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

আজ দেশব্যাপী জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালন করা হবে। এ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার তার মেয়াদের শেষ প্রান্তে চলে এলেও নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী, নিরাপদ সড়কের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়নি। ফলে সড়কে প্রতিদিন অসংখ্য প্রাণহানি ঘটছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর সড়কে প্রায় আট হাজারের বেশি প্রাণহানির তথ্য মিলেছে। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, সড়কে প্রতিদিন ৬৪ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ৩৬০ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটে। প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ আহত হন। প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় ৮০ হাজার মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ছেন। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি ১৭ বছরের কম বয়সী শিশু। হিসাবে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে ২২০ জন মানুষ প্রতিবন্ধী হচ্ছে কেবল সড়ক দুর্ঘটনায়।

অপরদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারাবিশ্বে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১৩ লাখ মানুষ মারা যান। বাংলাদেশে মারা যান ২৪ হাজার ৯৫৪ জন। সংস্থাটির তথ্যমতে, হতাহতের ৬৭ শতাংশই ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী। এক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিতে রয়েছে ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি। সংস্থাটির দাবি, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনাজনিত জিডিপির ক্ষতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থসামাজিক ক্ষতি হচ্ছে। বুয়েটের এআরআই

এর হিসাব বলছে, গত তিন বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় এমন ক্ষতির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা যদি নির্ভরশীল মানুষের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে সেটিকে জনসংখ্যার বোনাস বা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়। বাংলাদেশ এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের জন্য গর্ব করে। সড়ক দুর্ঘটনা এ গর্বের জায়গাতেই বেশি আঘাত হানছে। পুলিশের তথ্যভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে এআরআই বলছে, গত এক দশকে দেশের সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের ৫৪ শতাংশের বয়স ১৬ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। আর দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের সাড়ে ১৮ শতাংশ শিশু। তাদের বয়স ১৫ বছরের নিচে।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবার এই পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র থেকে ক্ষতি পূরণ পাওয়ার হকদার। যদিও ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’-তে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা তহবিল হতে নিহত ব্যক্তির পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ও আহত ব্যক্তিকে তিন লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান থাকলেও আইন কার্যকরের তিন বছরের মাথায় এই ক্ষতিপূরণ প্রদানের কার্যক্রম আজও শুরু করা হয়নি।’ তিনি জরুরি ভিত্তিতে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম চালুর দাবি জানান। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলকে সক্রিয় করার দাবি জানান।

এসময় ভিকটিম পরিবারের সদস্যরা তাদের নানা অভাব-অভিযোগ তুলে ধরে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল থেকে সহযোগিতা কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেনÑবুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক কাজী সাইফুন নেওয়াজ, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি তাওহিদুল হক, যুগ্ম মহাসচিব এম মনিরুল হক, বাংলাদেশ মানবাধিকার সমিতির সভাপতি মনজুর হোসেন ইশা, সেফ ড্রাইভের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ভিকটিম পরিবারের পক্ষ থেকে বাসভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে গ্রিন বাংলা পরিবহনের সহকারীর ধাক্কায় বাসের নিচে পড়ে নিহত ইরফান আহমেদের স্ত্রী ইসমত আরা, মিরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক আনোয়ার হোসেনের ছেলে আরাফাত হোসনে, রাজধানীর শেওড়াপাড়ায় বিমানবন্দর সড়কে জেব্রা ক্রসিংয়ের ওপর দিয়ে সড়ক পারাপারের সময় বেপরোয়া বাসের চাপায় নিহত আদনান তাসিনের বাবা আহসানউল্লাহ টুটুল, গুলিস্তানে স্বদেশ পরিবহনের বাসচাপায় নিহত সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. ফারুকের স্ত্রী জোহরা বেগম, ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়কের গৌরীপুরে বাস চাপায় আহত তিশা পরিবহনের হেলপার মাহবুবুল ইসলাম, ভিকটিম পরিবারের সদস্য কামাল হোসেন, সাজ্জাদ হোসেন প্রমুখ। সড়ক দুর্ঘটনার শিকার এসব পরিবারের সদস্যরা তাদের দুঃখ-দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে রাষ্ট্রের কাছে আইন অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা দাবি করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০