Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 10:14 pm

ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিচ্ছে ডব্লিউএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদক: কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সম্প্রতি কয়েক দফায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)। গতকাল ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

কুতুপালংয়ে ১৬ নং ক্যাম্পে ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ডের পর ক্ষতিগ্রস্ত দুই হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গাকে গতকাল খাবার সরবরাহ করছে ডব্লিউএফপি। এ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৫০০টি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হয়েছে।

সর্বশেষ গত রোববার অগ্নিকাণ্ডের পরপরই তাৎক্ষণিকভাবে ডব্লিউএফপি ও তার অংশীদার বাংলাদেশি এনজিও রিসোর্স ইন্টিগ্রেশন সেন্টার (রিক) ৩২৮টি পরিবারকে (আনুমানিক ১,৬০০ মানুষকে) উচ্চ পুষ্টিসমৃদ্ধ বিস্কুট সরবরাহ করেছে। অগ্নিকাণ্ডের ফলে এ পরিবারগুলোর কেউ তাদের ঘর হারিয়েছে আবার কারও রান্নার সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে গেছে। যেসব পরিবারের রান্নার কোনো ব্যবস্থা নেই, তাদের গতকাল থেকে ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে দিনে দুইবার খাবার সরবরাহ করা হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যতদিন পর্যন্ত এ পরিবারগুলোর ঘর পুনর্নির্মমাণ করা না হচ্ছে ও তাদের জন্য রান্না করার গ্যাসসহ রান্নার অন্যান্য সরঞ্জামের ব্যবস্থা না হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত এ খাবার সরবরাহ অব্যাহত থাকবে। আর, তারপর থেকে পরিবারগুলোকে ডব্লিউএফপির নিয়মিত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

কক্সবাজারে ডব্লিউএফপির সিনিয়র ইমার্জেন্সি কো-অর্ডিনেটর শিলা গ্রুডেম বলেন, ১৬নং ক্যাম্পে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা দেখে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি আরও বলেন, সৌভাগ্যক্রমে বিভিন্ন জাতীয় সংস্থা, জাতিসংঘ সংস্থা, খুচরা বিক্রেতা ও স্থানীয় রেস্টুরেন্টের সঙ্গে অংশীদারিত্বের কল্যাণে, সর্বস্ব হারানো এ রোহিঙ্গাদের তাৎক্ষণিক ত্রাণ দেয়ার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে, এজন্য আমরা প্রত্যেকেই কাজ করে যাচ্ছি।

২০২১ সালের মার্চে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের সময়ের মতোই, ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা, বিশেষত, যারা আগুনে তাদের নথিপত্র হারিয়েছে, তাদের সহায়তার জন্য, খাদ্য নয় এমন সামগ্রীর ব্যবস্থা নিশ্চিত করে চলেছে। এছাড়া ডব্লিউএফপি ও ইন্টার এজেন্সি সাইট মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্টের (এসএমইপি) স্বেচ্ছাসেবকরা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করার কাজে নিয়োজিত রয়েছে।

কক্সবাজারে ডব্লিউএফপির নিয়মিত খাদ্য সহায়তা কার্যক্রমের অধীনে রোহিঙ্গাদের ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে একটি করে ইলেকট্রনিক ভাউচার দেয়া হয়, যাতে প্রত্যেক রোহিঙ্গার জন্য মাসিক ভাতা হিসেবে প্রতি মাসে এক হাজার ২৭ টাকা করে দেয়া থাকে। এ ভাউচারটি ব্যবহার করে তারা ক্যাম্পজুড়ে ২২টি ই-ভাউচার আউটলেট থেকে সরাসরি তাদের পছন্দমতো খাবার কিনতে পারে। এ ই-ভাউচার আউটলেটগুলো পরিচালনা করে বাংলাদেশি খুচরা বিক্রেতারা। এ অগ্নিকাণ্ডের ফলে ডব্লিউএফপির কোনো স্থাপনা ধ্বংস হয়নি।

প্রসঙ্গত, কক্সবাজারে রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবির, যাতে প্রায় ৯ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করে। বাঁশ ও ত্রিপল দিয়ে তৈরি রোহিঙ্গাদের ঘনবসতিপূর্ণ ঘরগুলোতে আগুন লাগা অন্যতম এক বিপজ্জনক ব্যাপার, যা রোহিঙ্গাদের ঝুঁকির মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক অগ্নিকাণ্ডের ফলে ১০ হাজার ঘর পুড়ে গিয়েছিল আর বাস্তুচ্যুত হয়েছিল কমপক্ষে ৪৫ হাজার মানুষ। এছাড়া ২০২১ সালের জুলাই মাসে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ৪৬ হাজার রোহিঙ্গা। সে সময় বৃষ্টির কারণে ভয়াবহ ভূমিধসের ঘটনাও ঘটেছিল।