ক্ষতিগ্রস্তদের ৯ কোটি টাকা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক : রাজধানীর বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও মালিকদের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে ৯ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে এরই মধ্যে তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।

গত ৪ এপ্রিল ভোরে দেশে কাপড়ের অন্যতম বড় মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে ডিএসসিসির মালিকানাধীন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটÑবঙ্গবাজার ইউনিট, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগরী ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট ভস্মীভূত হয়ে যায়। বঙ্গবাজারের পূর্ব পাশে মহানগর শপিং কমপ্লেক্সের বেশিরভাগ দোকান ভস্মীভূত হয় এবং বাকিগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া পাশের সাততলা এনেক্সকো টাওয়ারও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ঈদ সামনে রেখে সব দোকানে তোলা হয়েছিল লাখ লাখ টাকার পণ্য। আগুনে কারও প্রাণহানি না হলেও আর্থিকভাবে বিপুল ক্ষতিতে পড়েন ব্যবসায়ীরা। অগ্নিকাণ্ডের ওই ঘটনায় সব মিলিয়ে তিন হাজার ৮৪৫টি দোকান পুড়ে ৩০৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে সিটি করপোরেশনের গঠিত তদন্ত কমিটি হিসাব দিয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ‘উন্নয়ন সহয়োগিতা: দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা এবং বহুপাক্ষিক উন্নয়নে ব্যাংকের ভূমিকা’ শীর্ষক ইসিওএসওসি (ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল) প্যানেল আলোচনায় আগে ধারণকৃত তার ভিডিও মূল বক্তব্যে তিনি বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকের (এমডিবি) মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য সম্মিলিত বৈশ্বিক প্রচেষ্টার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আসুন আমরা এমডিবি’র মাধ্যমে দরিদ্র জনগণকে সহায়তা করে একটি সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলতে একত্রে কাজ করি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ২০৩০ এজেন্ডা সফলভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে অর্থায়ন সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে ইসিওএসওসি’র ভূমিকার কথা স্বীকার করি।’

তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতি বর্তমানে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রথমত, কভিড-১৯ মহামারি এবং দ্বিতীয়ত, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিস্ময়কর প্রভাব পড়েছে। এ জটিল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দুর্বল অংশের স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তুলতে এবং বহুমাত্রিক সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এমডিবি বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এমডিবির অর্থায়ন বৈশ্বিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বহু-পাক্ষিক সংলাপকে যেমনি করে উৎসাহিত করবে, তেমনিভাবে এসডিজি অর্জনের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিতকারী আধুনিক নীতিমালাকেও  এগিয়ে নেবে।’

তিনি বলেন, এটি ২০১৫ সালের আদ্দিস আবাবা অ্যাকশন এজেন্ডায় সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখিত ম্যান্ডেটের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

প্রধানমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রযুক্তির মতো বৈশ্বিক জনবান্ধব পণ্য প্রচারের ক্ষেত্রে এমডিবি’কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। টেকসই উন্নয়নে এগুলোর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি সহায়তা ও জ্ঞানদানের ব্যবস্থা এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নে সহায়তা করার ব্যাপারে এমডিবিগুলো এক অনন্য অবস্থানে রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোয় স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে কাজ করার সময় আমাদের অবশ্যই তাদের পূর্ণ সম্ভাবনাগুলো অন্বেষণের ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতা মানতে হবে। এসবের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য, ডিজিটাল বিভাজন এবং উন্নয়ন বিভাজন অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। টেকসই ও ন্যায়সংগত উন্নয়নের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিস্থাপকতা গড়ে তোলার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা লক্ষ করেছেন, এমডিবি’র সুদের হার ও পরিষেবা চার্জ বাড়ছে এবং এ ধরনের পদক্ষেপ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘এ অবস্থায়, আমি এমডিবি’কে এমন একটি ঋণ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নির্ধারণ করার আহ্বান জানাতে চাই, যা আর্থিকভাবে কার্যকর হতে হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২০১৫ সালে নি¤œ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং অতঃপর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত ও জ্ঞানভিত্তিক ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চূড়ান্ত রূপকল্প নিয়ে আমাদের লক্ষ্য ২০৩১ সালের মধ্যে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা লাভ করা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের মতো দেশগুলোর সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসা উচিত। আজ আমরা যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হচ্ছি, তা বহুমুখী এবং এসব মোকাবিলার জন্য একটি সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বকে ঝুঁকি জ্ঞানসমৃদ্ধ এমন একটি পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে, যা বহুমাত্রিক ঝুঁকিকে বিবেচনায় আনে, লিঙ্গসমতাকে এগিয়ে নেয়, সামাজিক সুরক্ষা জোরদার করে এবং এমডিবি’র মাধ্যমে রেয়াতি ঋণের প্রসার ঘটায়।

তিনি বলেন, ‘একত্রে কাজ করার মাধ্যমে এবং এমডিবি’র সম্পদ ও দক্ষতা কাজে লাগিয়ে আমরা আগামী প্রজšে§র জন্য আরও টেকসই ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করতে পারি।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০