এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): শেষ হচ্ছে দেশের বহুল প্রতীক্ষিত মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ। আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে প্রকল্পের যাবতীয় কাজ। তবে এর মধ্যে টানেল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় টানেল প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত আনোয়ারার ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার তাদের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ নিয়ে শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। দেশের এ মেগা প্রকল্পের এক প্রান্ত পতেঙ্গা হলেও অন্য প্রান্তে আনোয়ারা। ফলে এ টানেলের সড়কের কারণে বাড়িঘর ফসলি জমিসহ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বন্দর ও আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ, চাতরী ইউনিয়নের প্রায় ৬০০ পরিবার।
জানা যায়, এ টানেলের মূল সংযোগ সড়ক বন্দর, রাঙ্গাদিয়া, বৈরাগ ও চাতরী মৌজার অংশ দিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে পিএবি ছয় লেন সড়কে। টানেল সড়কের ভূমি অধিগ্রহণ মালিকদের এলএ শাখা থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ভূমির মালিকদের পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি দিয়ে আসছে। তবে ইতোমধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় এ পুনর্বাসনের অতিরিক্ত মঞ্জুরি কার্যক্রম স্থগিত করতে যাচ্ছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষ। ফলে এ পুনর্বাসন প্রকল্পের অতিরিক্ত মঞ্জুরির এসব এলাকার ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবারের প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা পাওনা থেকে বঞ্চিত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন।
টানেল কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বৈরাগ মৌজা থেকে ২০.৪০৩০ একর ও বন্দর, চাতরী, রাঙ্গাদিয়া থেকে প্রয়োজনীয় নাল, বাড়িঘর, ভিটা, পুকুর ইত্যাদি ভূমি অধিগ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ গত ৩১ আগস্ট স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, আগামী ৩১ অক্টোবরের পরে এ প্রকল্পের আর কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত ফাইল জমা নেবে না তারা। প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় তারা তাদের প্রকল্পের কাজ সেতু মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করবে।
তবে টানেল নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর দাবি, অধিগ্রহণকৃত ভূমির অনেক দাবিদার (মালিক) করোনাকালীন দেশে সবকিছু স্থবির থাকায় ও অনেকে প্রবাসে থাকায় এবং প্রকৃত মালিকানা ও ভুল বিএস রেকর্ড সংক্রান্ত বিষয়ে আদালতে মামলা মোকাদ্দমা বিচারাধীন থাকায় ও নাবালক-নাবালিকাদের অভিভাবক নিযুক্ত সংক্রান্ত সমস্যাসহ নানা জটিলতার ফলে অনেক ভূমির ক্ষতিপূরণের টাকা এখন পর্যন্ত উত্তোলন করতে পারেনি। এছাড়া প্রায় আড়াই বছর ধরে করোনার জন্য স্থবির হয়ে থাকাসহ নানা জটিলতার কারণে এখন পর্যন্ত তিন ভাগের এক ভাগ ভূমির মালিকরা ক্ষতিপূরণের টাকা ওঠাতে পারেনি। যার ফলে কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তে অন্তত ৬০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যরা। তারা ভূমির মালিকরা ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে এর মধ্যে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, ইউএনও স্থানীয় সাংসদ ভূমিমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন।
বৈরাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নোয়াব আলী বলেন, ১৯৮০ সাল থেকে সিইউএফএল কাফকো, কেইপিজেড, চীনা ইকোনোমিক্যাল জোন, গ্যাস লাইন, বিদ্যুৎ লাইনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য এলাকার বহু সম্পত্তি অধিগ্রহণ করা হয়। অথচ ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় এবং সহায় সম্পত্তি হারিয়ে অনেকে ভূমিহীন নিঃস্ব হয়ে যায়। বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন সড়কে টানেল নির্মাণ ক্ষতিপূরণ পায়নি অন্তত ৬শ পরিবার। এ অবস্থায় কর্তৃপক্ষের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা হলে ক্ষতিগ্রস্তরা এ ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে বলে আমাদের সংশয় রয়েছে। তাই আমরা ভূমিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করছি অন্তত আরও এক বছর সময় বাড়ানো হোক।
এ বিষয়ে টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে এ বিষয় নিয়ে তো আমরা বসে থাকতে পারি না। তারা নানা জটিলতার কারণে আটকে আছে। নির্দিষ্ট একটা সময়সীমার মধ্যে আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। ক্ষতিপূরণ নিয়ে কোনো কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তার জন্য একাধিকবার মাইকিং এবং আমাদের নিয়োজিত সংস্থাগুলোর মাধ্যমে কাজ করে গেছি। তবুও আমরা চেষ্টা করব মানুষ যাতে ক্ষতিপূরণ পায়।