নিজস্ব প্রতিবেদক: হারানো ব্যাগের ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় জরিমানার মুখে পড়েছে সেবার মান বিতর্কের মুখে থাকা মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক মালিন্দো এয়ারলাইনস। আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভ্রাম্যমাণ আদালত এয়ারলাইনসটিকে আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ওয়ারস কনভেনশন অনুযায়ী কোনো যাত্রীর ব্যাগ হারিয়ে গেলে তাকে কেজিপ্রতি ২০ মার্কিন ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দিতে হয় সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসকে। কিন্তু মালিন্দো এয়ারলাইনস আইন অম্যান্য করে যাত্রীদের ব্যাগ হারানোর ক্ষেত্রে কেজি প্রতি ১০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। এর জের ধরে হারানো ব্যাগের ক্ষতিপূরণ না দেয়ার কারণে মালিন্দো এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সালমান চৌধুরী নামের একজন যাত্রী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হতে হয়েছে এয়ারলাইনসটিকে। আইন অনুযায়ী, জরিমানার অঙ্কের ২৫ শতাংশ হিসেবে অভিযোগকারী ওই যাত্রী ৬২ হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন।
অভিযোগকারী সালমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া থেকে মালিন্দো এয়ারে ২০১৬ সালের ৪ নভেম্বর ঢাকায় আসি। ওই দিন আমার ব্যাগটি হারিয়ে যায়। ব্যাগ না পেয়ে আমি তাদের কাছে অভিযোগ করি। তারা পরের মাসে (ডিসেম্বর) ব্যাগ পাওয়া না গেলে কেজিপ্রতি ১০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানায়। কিন্তু বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের অফিসিয়াল ফেসবুকে পেইজের মাধ্যমে আমি কেজিপ্রতি ২০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি জানতে পারি। বিষয়টি আমি মালিন্দো এয়ারকে জানালে তারা তাদের নিয়ম অনুসারে ১০ ডলার হারেই ক্ষতিপূরণ দেবে বলে জানায়। প্রতি কেজি ১০ ডলারের হিসাবেই গত ৫ মার্চ ক্ষতিপূরণের চেক দেয়। গতকাল বিমানবন্দরের ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে লিখিতভাবে বিষয়টি জানাই।’
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানিয়েছে, সালমান চৌধুরীর অভিযোগের ভিত্তিতে মালিন্দো এয়ারলাইনসকে তলব করেন আদালত। এয়ারলাইনসটির স্টেশন ম্যানেজার প্রদীপ কুমার আদালতে নিজেদের ম্যানুয়াল উপস্থাপন করে। সেখানেও প্রতি কেজি ১০ ডলার হারে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে।’
বিমানবন্দরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যাত্রীর অভিযোগ আমলে নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৫ ও ৫৩ ধারা মেনে মালিন্দো এয়ারলাইনসকে মোট আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একইসঙ্গে এখন থেকে যাত্রীদের বিদ্যমান আইন ও প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যথাযথ সেবা এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তবে এ বিষয়ে জানতে টুন এভিয়েশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও মালিন্দো এয়ারলাইনসের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এম রেজাউল করিম রেজার সঙ্গে কয়েক দফায় সেলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার লায়ন এয়ারের যৌথ উদ্যোগ মালিন্দো এয়ারলাইনস। বর্তমানে বাংলাদেশ তাকে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। তবে এয়ারলাইনসটির সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ রয়েছে। ‘শুধু কম খরচ নয়’ স্লোগান নিয়ে পথচলা শুরুর তিন বছরের মধ্যেই ‘সস্তার তিন অবস্থা’ প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। ফ্লাইট বাতিল, সময় পরিবর্তন, বিলম্ব, লাগেজিং হ্যান্ডলিংয়ে আন্তরিকতার ঘাটতি ও সেবার মানে নিম্নগতির কারণে মালিন্দো এয়ারলাইনসে যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে।