Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:26 am

ক্ষত রেখে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি

এনামুল হক নাবিদ, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): গত সাত দিনের টানা বৃষ্টি ও ঢলের পানিতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার রূপ দেখেছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ। টানা ভারী বৃষ্টির কারণে প্লাবিত হয়েছে আনোয়ারার অন্তত ৪০টি গ্রাম। এদিকে বুধবার থেকে ভারী বৃষ্টি বন্ধ হলে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ধীর গতিতে নামতে শুরু করেছে পানি। তবে বন্যার পানি নামলেও রেখে যাচ্ছে ক্ষত।

প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও রাস্তায় রেখে যাচ্ছে ক্ষত। প্রায় ৭ দিনের বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মৎস্যজীবীদের। এছাড়া  স্রোতে ধসে গেছে বহু বাড়িঘর গ্রামীণ সড়ক ভেসে গেছে গবাদিপশু, পুকুরের মাছ। পানিতে ডুবে ও স্রোতে ভেসে মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।

দুই মৃত্যু: গত সোমবার (৭ আগস্ট) দুপুর ১২টায় উপজেলার রায়পুর গ্রামে বৃষ্টির পানিতে জমে থাকা বিলের পানিতে ডুবে ৪ বছর বয়সের জোবায়ের নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা হয়েছে। নিহত ওই শিশু রায়পুর গ্রামের ৪নং ওয়ার্ডে মো. সেলিমের ছোট ছেলে। এছাড়া গতকাল বুধবার কর্ণফুলী নদীর ১৫ নম্বর সিইউএফএলের জেটির নিচ থেকে ৭০ বছরের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে লাশটি উদ্ধার করার বিষয়টি নিশ্চিত করেন কর্ণফুলী থানার রাঙ্গাদিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রেজাউল হোসেন।

মৎস্যজীবীদের ১০ কোটি টাকার ক্ষতি: টানা বৃষ্টি আর বান্দরবান থেকে সাঙ্গু নদীতে আসা ঢলের পানিতে খাল-বিল ডুবে তলিয়ে গেছে পুকুর আর প্রজেক্ট।  দীর্ঘ সময় বর্ষাকালীন বৃষ্টি না হলেও গত পাঁচ দিনের হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মৎস্যজীবীদের। বৃষ্টি আর খালের পানিতে ডুবে গেছে পুকুর আর  মাছের প্রজেক্ট। এতে ক্ষতি হয়েছে অসংখ্য মৎস্যজীবীর। তারা বলছেন হঠাৎ টানা বৃষ্টির কারণে তাদের পুকুর প্রজেক্ট ডুবে কোটি কোটি টাকার মাছ ও পোনা চলে গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর মধ্যে আনোয়ারা সদরের বিলপুর, বোয়ালগাও, সিংহরা, বারখাইনের শিলাইগড়া, বারখাইন, তৈলারদ্বীপ, ঝিওরি, চাতরী ইউনিয়নের চাতরী, হাইলধর ইউনিয়নের হাইলধর, ইছাখালী, জুঁইণ্ডী ইউনিয়ন  ও রায়পুর ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামের অধিকাংশ পুকুর ও মাছের প্রজেক্ট ডুবে  গেছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিরা। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জুঁইদণ্ডী ও পরৈকোড়া এলাকার চাষিরা। এখানে অধিকাংশ পুকুর প্রজেক্ট ডুবে গেছে।

উপজেলার সিনিয়র মৎস্য অফিসার রাশীদুল হক জানান, বৃষ্টি আর ঢলের পানির কারণে আনোয়ারায় অনেক মাছের পুকুর প্রজেক্ট ডুবে গেছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জুঁইদণ্ডী এলাকায়। এছাড়া চাতরী ও বারখাইন এলাকায় মৎস্যজীবীরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আনোয়ারায় অন্তত ১০ কোটি টাকার মৎস্যজীবীদের ক্ষতি হয়েছে।

ভেঙে গেছে গ্রামীণ সড়ক: ভারী বর্ষণ ও টানা পাঁচ দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার গ্রামীণ সড়ক ভেঙে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে। ফলে সড়কগুলোর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আনোয়ারায় প্লাবিত এলাকায় অন্তত ২০টি সড়ক ভেঙে গেছে। বিশেষ করে চাতরী ইউনিয়নের কৈখাইন-ডুমুরিয়া-রুদুরা বাংলাবাজার গ্রামীণ সড়কটি টানা বৃষ্টির ফলে গত রোববার ভোর রাতে বাংলা বাজারউপজেলা প্রকৌশলী তাসলিমা জাহান বলেন, বন্যায় অন্তত ২০টির মতো সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। তার মধ্যে কার্পেটিং সড়ক ৬টির মতো হবে। আমরা যেগুলো আগে করা প্রয়োজন সে গুলো দ্রুত সংস্কার করব। বাকিগুলো ধাপে ধাপে সংস্কার করা হবে।

নষ্ট হয়েছে বেড়িবাঁধ সøুইসগেট: টানা বৃষ্টি আর প্রবল জোয়ারের পানিতে বেশ কিছু জায়গায় ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ। নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটি সøুইসগেট। জানা যায়, হাইলধর সাঙ্গু নদীর সøুইসগেট-সংলগ্ন বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে অন্তত ৮টি গ্রাম। গতকাল পানির স্রোত বন্ধ করতে স্থানীয়রা বালু দিয়ে বেড়িবাঁধ সংস্কার করেন। আকবর নামের এক স্থানীয় জানান, এই এক সøুইসগেট পরিপূর্ণ বাঁধসহ নির্মাণ না করায় এ পূর্ব অঞ্চলের ৮টি গ্রাম প্লাবিত হয়। গতকাল অবস্থা ভয়াবহ দেখে আমরা গ্রামবাসী বাঁধটি নির্মাণ করি। এছাড়া কৈখাইনের সøুইসগেটসহ বেশ কয়েক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি সরেজমিন থেকে তদারকি করেছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কলিম উদ্দীন।

এদিকে টানা বর্ষণ আর বন্যায় তলিয়ে গেছে আমনের বীজতলা। কৃৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী বলেন, টানা ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় আনোয়ারায় অধিকাংশ বীজতলা তলিয়ে গেছে। এটা আমনের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হবে। এতে করে অন্তত ৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।