Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 10:27 pm

খনির এমডিসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধি (ফুলবাড়ি): দিনাজপুরের ফুলবাড়ির বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা উধাওয়ের ঘটনায় সদ্য হওয়া খনিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কোম্পানি সচিবসহ ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে খনি কর্তৃপক্ষ। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (কয়লা খনির) ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিছুর রহমান গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেনÑসদ্য প্রত্যাহার হওয়া এমডি হাবিব উদ্দিন আহম্মদ, কোম্পানি সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়া, মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন) এটিএম নুরুজ্জামান, মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) আবদুল মান্নান পাটোয়ারী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) একেএম খালেদুল ইসলাম, উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন) জোবায়ের আলী, উপ-মহাব্যবস্থাপক (অর্থ ও হিসাব) গোপাল চন্দ্র সাহা, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মাসুদুর রহমান হাওলাদার, ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও নিরাপত্তা) সৈয়দ হাছান ইমাম, ব্যবস্থাপক জাহিদুল ইসলাম, ব্যবস্থাপক অশোক কুমার হাওলাদার, ব্যবস্থাপক আরিফুর রহমান, উপ-ব্যবস্থাপক একরামুল হক, খলিলুর রহমান মোরশেদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, জাহেদুর রহমান, সত্যন্দ্র নাথ বর্ম্মন ও মোশারফ হোসেন। মামলা দায়েরের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ফুলবাড়ী সার্কেল) রফিকুল ইসলাম।
মামলার বিষয়ে পার্বতীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফকরুল ইসলাম বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, জালিয়াতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে এক লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৪ টন কয়লা খোলা বাজারে বিক্রি করে ২৩০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে।
এদিকে ঘটনা তদন্ত ও পরিদর্শন করতে গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে আসেন পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোহাম্মদ ফয়জুল্যার নেতৃত্বে ছয় সদস্যর একটি তদন্ত কমিটি। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনÑবড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পেট্রোবাংলা পরিচালক (প্লানিং) আইয়ুব আলী খান, বাংলাদেশ ভূ-তত্ত্ব জরিপ অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. নেহাল উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুশফিকুর রহমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) জহুরুল হক ও অতিরিক্ত সচিব (অপারেশন) রতন চন্দ্র পণ্ডিত। তারা বড়পুকুরিয়া ও তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পরিদর্শন করেন ও বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর বেলা সাড়ে ১১টায় তারা খনি থেকে বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করেন। তবে তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে গতকাল বিকেলে প্রতিমন্ত্রী তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উত্তোলনকৃত কয়লার মধ্যে এক লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কাগজে-কলমে এক লাখ ৪৬ হাজার টন কয়লা থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে মাত্র দুই টন। এ ঘটনায় গত ১৯ জুলাই বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন ও সচিব আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে প্রত্যাহার করে খনিটির নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা। একই কারণে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইনিং অ্যান্ড অপারেশন) এটিএম নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এর ছয় দিনের মাথায় খনিটির ১৯ জন কর্মকর্তার নামে মামলা দায়ের করে খনি কর্তৃপক্ষ।
বড়পুকুরিয়া খনির এ কয়লা ব্যবহƒত হয় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। কয়লা খোয়া যাওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীও। প্রায় দেড় লাখ টন কয়লা কোথায় গেল তার ‘পূর্ণ তদন্ত’ করতে সোমবার সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেন তিনি। খনিতে কয়লা না থাকায় গত ২২ জুলাই থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ফলে উত্তরের আট জেলায় দেখা দিয়েছে বিদ্যুতের ঘাটতি।