ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প

খরচ হয়নি ৩৯৩ কোটি টাকা মেয়াদ বাড়ছে ছয় মাস

রহমত রহমান: চলতি ডিসেম্বর মাসেই ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। ৬৯০ কোটি টাকার প্রকল্পের মাত্র ২৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঋণে পরিচালিত হচ্ছে প্রকল্প। খরচ না হওয়ায় ঋণের ১২০ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও অনলাইনে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্প মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক এতে সায় দিয়েছে। তবে প্রকল্প মেয়াদ শেষেও পুরো অর্থ খরচ হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে প্রকল্প মেয়াদ শেষে অনলাইনের কার্যক্রম যাতে মুখ থুবড়ে না পড়ে সেজন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ৩০ আইটি কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। ভ্যাট অনলাইনে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিতে প্রকল্প রক্ষণাবেক্ষণকারী ভিয়েতনামের কোম্পানির সঙ্গে একটি চুক্তি করতে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে সাত বছর শেষেও অনলাইনে ভ্যাট নিবন্ধন, রিটার্ন দাখিলসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভ্যাট আহরণ বাড়ানো ও হয়রানিমুক্ত করতে হলে অনলাইন প্রক্রিয়া আরও সহজ করার জন্য মত দিয়েছেন তারা।

এনবিআর সূত্র জানায়, বিশ্বের ১২৪টি দেশে অনলাইনে ভ্যাট দেয়ার ব্যবস্থা আছে। দেশে ২০১২ সালের ২৭ নভেম্বর মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২ পাস হয়। নতুন এই ভ্যাট ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ অটোমেশনের মাধ্যমে ভ্যাট প্রশাসনকে শক্তিশালী ও আধুনিকায়ন করা, ভ্যাট আদায় বৃদ্ধিপূর্বক ভ্যাট জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বর্তমানের চেয়ে এক শতাংশ বৃদ্ধি করাসহ ভ্যাট কমপ্লায়েন্সের জন্য বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সালে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। নতুন আইন বাস্তবায়নে ৫৫১ কোটি টাকার এ প্রকল্প নেয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় ধরা হয় ১০১ কোটি টাকা। বাকি ৪৫০ কোটি টাকার জোগান দেবে বিশ্বব্যাংক। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে ২০২০ সালের ডিসেম্বর করা হয়েছে। আর ব্যয় ১৩৯ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬৯০ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ভ্যাট অনলাইনে ই-বিআইএন (ইলেকট্রনিক বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন) নিবন্ধন, ভ্যাট রিটার্ন দাখিল, অনলাইনে ভ্যাট পরিশোধসহ ভ্যাটসংক্রান্ত বেশ কিছু কাজ করা যাচ্ছে। চলতি মাসে প্রকল্প মেয়াদ শেষ হচ্ছে। কিন্তু প্রকল্পের কিছু মডিউল ও সফটওয়্যারটি যুগোপযোগী করতে কিছু কাজ বাকি রয়েছে। ফলে কাজ করতে প্রকল্প মেয়াদ ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত (ছয় মাস) বৃদ্ধি করতে এনবিআরে আবেদন করা হয়। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়। বিশ্বব্যাংক প্রথম অবস্থায় রাজি হয়নি। মেয়াদ বাড়লেও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে না বলে আশ্বাস দেওয়ার পর বিশ্বব্যাংক রাজি হয়। প্রকল্প মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মোট ব্যয় ৬৯০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পে মাত্র ২৫৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। টাকা খরচ না হওয়ায় তা থেকে ১২০ কোটি টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে ভ্যাট প্রকল্প থেকে সুপারিশ করা হয়েছে। এতে ঋণের পরিমাণ কমবে। অপরদিকে ডিসেম্বর শেষে আরও ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। ফলে প্রকল্পের মোট খরচ দাঁড়াবে ২৯৭ কোটি টাকা। মেয়াদ ছয় মাস বাড়ানোর ফলে আরও ২৪০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তবে মেয়াদ শেষে প্রকল্প ব্যয় ৫০০ কোটি টাকার মধ্যেই থাকবে বলে ধারণা করছেন প্রকল্প কর্মকর্তারা।

সূত্র আরও জানায়, ভ্যাট অনলাইনের কাজ করছে ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেম। প্রতিষ্ঠানটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ও কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। অপরদিকে ১২ অক্টোবর প্রকল্প থেকে এনবিআর চেয়ারম্যানকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যাতে বলা হয়, ৩১ ডিসেম্বর প্রকল্প মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আইভাস সিস্টেমটি এনবিআরে হস্তান্তর করা প্রয়োজন। হস্তান্তর ও পরবর্তী সময়ে আইভাসের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, আইভাস সিস্টেম সচল রাখার জন্য ৬০০ এমবিপি’র ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ নিশ্চিত করতে নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী নিয়োগ করা ও ব্যয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা।

আইভাস সিস্টেমের হার্ডওয়্যারের মেয়াদ চলতি বছরের ২১ মার্চ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্প থেকে এরই মধ্যে সফটওয়্যারের মেয়াদ ২০২১ সালের ২১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু হার্ডওয়্যারের মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। যেহেতু হার্ডওয়্যারগুলো অনেক পুরোনো বলে রিপ্লেসমেন্ট করার চিন্তা করা হয়েছে, সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া ও বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন।

আরও বলা হয়, এনবিআরের সঙ্গে ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের মধ্যে ‘সাপোর্ট সার্ভিস’ চুক্তি করা, আইভাস সিস্টেমের ওপর এনবিআরের আইটি কর্মকর্তাদের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার কার্যক্রম প্রকল্প থেকে নেয়া হয়েছে। তবে এত অল্প প্রশিক্ষণে এত বড় সিস্টেম সচল রাখা সম্ভব নয়। ফলে এফপিটি ইনফরমেশন সিস্টেমের সঙ্গে একটি সাপোর্ট সার্ভিস চুক্তি করা প্রয়োজন। এর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ ও বরাদ্দ রাখা দরকার।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ছয়টি ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ভ্যাট পরিশোধ করা যায়। আরো চারটি ব্যাংক সহসাই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া সোনালী ব্যাংকের গেটওয়ে ব্যবহার করে ভ্যাট দেওয়া যাবে। ভ্যাট প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করতে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে বিকাশ, রকেট ও ইউক্যাশ এর মাধ্যমে ভ্যাটের টাকা পরিশোধ করা যাচ্ছে। ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে নিবন্ধন নিয়েছে দুই লাখ ১৩ হাজার প্রতিষ্ঠান। এরমধ্যে অক্টোবর মাসে অনলাইনে রিটার্ন দাখিল হয়েছে ৭৩ হাজার ৯৩১টি।

এ বিষয়ে ভ্যাট অনলাইন প্রকল্প পরিচালক কাজী মোস্তাফিজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এখন অনলাইনে ৭৩ হাজার রিটার্ন দাখিল হয়। আমাদের টার্গেট হলো ডিসেম্বর নাগাদ রিটার্ন এক লাখে নিয়ে যাওয়া। প্রায় তিন হাজার বিআইএন বাতিল করতে হবে। এসব বিআইএন বাতিল করতে কমিশনারেটগুলোকে আমরা চিঠি দিয়েছে। ছয়মাস মেয়াদ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক রাজি হয়েছে। আগামী ছয়মাসের মধ্যে ভ্যাটকে অনলাইন করার যে কার্যক্রম তা পুরোপরি শেষ হবে। নতুন ভ্যাট আইনকে পুরোপুরি এ সফটওয়্যার বা অনলাইনে চলে আসবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রকল্প মেয়াদ বাড়াতে বিশ্বব্যাংক রাজি হয়েছে, কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আইভাস সিস্টেম চালু রাখতে এফপিটি এর সাথে একটি সাপোর্ট চুক্তি করা প্রয়োজন। আমরা এনবিআরকে চিঠি দিয়েছি, এখনো কোন পদক্ষেপ নেয়নি। রিটার্ন ফরম বাংলা করা হচ্ছে। ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে তা উম্মুক্ত করা হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০