খরার কবলে আর্জেন্টিনার ফসলের ক্ষেত

শেয়ার বিজ ডেস্ক: দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা সাম্প্রতিক সময়ে প্রচণ্ড খরার কবলে পড়েছে। এ বছর দেশটিতে বৃষ্টি না হওয়ায় এত খরা পড়েছে যে, গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থার তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় দক্ষিণ আমেরিকার শস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত আর্জেন্টিনায় খরার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যেখানে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে না পারায় বিশ্ব বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। খবর: রয়টার্স। 

আর্জেন্টিনার কৃষিভিত্তিক শহর সিগুয়েনা প্রচুর পরিমাণে সয়াসিড, গম, ভুট্টা এবং গবাধিপশুর খাবার উৎপাদেনর জন্য বিখ্যাত। তীব্র খরায় শহরটিতে এ বছর এসব ফসল ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরটির বাসিন্দা স্থানীয় কৃষক রেঞ্চার আন্দ্রেস বেটিগার বলছেন, তার খামার গত ৬০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে লড়াই করে চলছে। তিনি বলেন, পানির অভাবে তার খামারে সয়া, ভুট্টা ও গবাদি পশু পর্যন্ত মরে গেছে।

খামারি বেটিগার আরও বছলেন, শস্যক্ষেতের জন্য পানি সরবরাহ করতে তাকে অন্তত ৫২ কিলোমিটার (৩২ মাইল) পথ পারি দিয়ে ট্যাংকে করে পানি আনতে হয়। তিনি জানান, গত বছর থেকে শুষ্ক আবহাওয়ায় কৃষকের ফসল রোপণ করতে বিলম্ব হচ্ছে। এমনকি অনেক কৃষক ফসল রোপণ করতেও পারেনি। যারা কিছু ফসল রোপণ করেছেন, পানির অভাবে ওইসব ফসল জ্বলে-পুড়ে আঙ্গার হয়ে যাচ্ছে।

৪১ বছর বয়সী ওই খামারি বলেন, ‘এটা খারাপ সংবাদ ছাড়া আর কিছু নই’। তিনি বলেন, আমাদের কাছে আর কিছু করার নেই, আমরা ৫২ কিলোমিটার ভ্রমণ করে খামারের পশুর জন্য চার-পাঁচ দিনের পানি সংরক্ষণ করতে পারি। যদিও আমরা প্রায় প্রতিদিনই প্রাণিগুলের জন্য পানি সরবরাহের জন্য যায়। তবে পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেছি। তিনি বলেন, এটা চিন্তা করলে, আমার খুব ভয় হয়। কারণ ইতোমধ্যে শারীরিক ও আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছি।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আর্জেন্টিনার খরা বিশ্ববাজারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। খরার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কৃষকদের ফসল কাটার দৃষ্টিভঙ্গি বদল করতে বাধ্য করছে এবং বিশ্বের শীর্ষ রপ্তানিকারক সয়া তেল এবং খাবার, ভুট্টার জন্য তৃতীয় স্থান হারাতে বসেছে দেশটি।  এছাড়া প্রধান শস্য গম ও পশুখাদ্য রপ্তানি হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। এসব কারণে আর্জেন্টিনা অতিপ্রয়োজনী ডলারের রিজার্ভ সংগ্রহে ব্যাহত হয়েছে, যা ভঙ্গুর অর্থনীতির দিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিচ্ছে এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি ও রাজস্ব ঘাটতির বেড়াজালে সরকারকে আটকিয়ে রাখছে।

এদিকে  গত সপ্তাহে দেশটির সরকার জানুয়ারি মাসের সিপিআই প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, জানুয়ারিতে বছর ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯৮.৮ শতাংশ, যা গত ৯০-এর দশক থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। এ অবস্থান দেশটির সাধারণ নাগরিকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

খরার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী নয়: এদিকে টানা খরার জন্য দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করলেও নতুন এক বৈজ্ঞানিক গবেষণা দাবি করছে, ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, বলিভিয়া ও উরুগুয়ে গত ৩ বছর ধরে যে খরা চলছে তার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন দায়ী নয়; তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এ অঞ্চলের উষ্ণয়ন শুষ্ক করার প্রভাবগুলো আরও খারাপ করছে। গতকাল গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।

গবেষণার সহ-লেখক লন্ডন ইম্পিরিয়াল কলেজের গ্রান্থাম ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ফেড্রিক অটো বলছেন, ‘বৃষ্টিতে জলবায়ু পরিবর্তনের কোনো সংকেত নেই’। তবে অবশ্যই এর মানে এই নয় যে, জলবায়ু পরিবর্তন এই খারাপ প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে না’।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০