গত ২৭ মার্চ রাত সাড়ে ৩টায় নোয়াখালী প্রেস ক্লাব থেকে তিনটি মাইক্রোবাস নিয়ে সোজা খাগড়াছড়ি। পথটুকু ভালোই লেগেছিল। কিন্তু কথায় কথায় বুঝতেই পারিনি কখন চলে এসেছি। পথে সহযাত্রীদের সঙ্গে বলাবলি করেছি অন্তত আরও একটি দিন থাকতে পারলে ভালো হতো। সহযাত্রীদের কেউই দ্বিমত পোষণ করেননি।
যাত্রার শুরুতে মনটা কিছুটা খারাপ ছিল। কেননা দূরে কোথাও ভ্রমণের অন্যতম উদ্যোক্তা দৈনিক মানবজমিনের নিজস্ব প্রতিনিধি নাছির উদ্দিন বাদল ভাই ফোন বন্ধ রেখেছেন। তাই বড্ড চিন্তিত ছিলাম। বাদল ভাইয়ের ফোন তো বন্ধ থাকার কথা ছিল না! যাহোক, পরে জানতে পারি তিনি কিছুটা অসুস্থ ছিলেন।
কবির হাট হয়ে এবার সোজা চলে গেলাম দাগনভূঁঞা। সেখানে ক্লাব সদস্যদের অপরাপর তিন গাড়ির সবাই একত্রিত হয়ে এবার সোজা গন্তব্যের উদ্দেশে। নাশতা সেরে নিলাম ফটিকছড়ির পাহাড়ি এক পথে। সেখান থেকে আবারও গাড়ির চলা। পথে রামগড়। দেখলাম বিরাট চা বাগান। সবাই একই সঙ্গে নেমে পড়লাম। বন্ধুরা তো ছবির পর ছবি তুলছেই। এখানে অনেকটা প্রাণবন্ত হই। সজীবতা ফিরে আসে সবার মধ্যে। আবার খাগড়াছড়ির পথে। বেলা সাড়ে ১১টায় পাহাড়ের আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবে। ক্লাবে আমাদের বরণ করতে সাধারণ সম্পাদকসহ অন্যরা আগে থেকেই যেন প্রস্তুত ছিলেন। খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের নেতাদের আপ্যায়ন, আতিথেয়তা ও ক্লাবের সার্বিক ও শৃঙ্খলা দেখে মুগ্ধ হলাম। কুশল বিনিময় শেষে বেরিয়ে পড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সজ্জিত ঝুলন্ত ব্রিজ, পার্কসহ আরও কিছু প্রাকৃতিক শোভামণ্ডিত নয়নাভিরাম দৃশ্যের সৌন্দর্য উপভোগে।
শহরটা আমার কাছে উন্নত প্রাকৃতিক শোভাবর্ধিত মফস্বল মনে হয়েছে। এখানে নেই কোনো যানজট। নেই বড়সড় গাড়ির কোনো দৌরাত্ম্যপনা। শহরের মুখে বাসস্ট্যান্ড। যাহোক, বেলা আনুমানিক আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সভাপতিসহ সবাই চলে গেলাম শহরের মনটানা হোটেলে। দুপুরের খাবারটা সেখানে বেশ ভালোই লেগেছে। এখান থেকে বেরিয়ে ছোটখাটো কেনাকাটাও করেছেন কেউ কেউ। ফের গাড়িতে। আসার পথে নেমে গেলাম আলুটোলা পার্কে। এখানে সুউচ্চ পাহাড়ের ওপর উঠে মনে হয়েছে কী নেই বাংলাদেশে! সবই আছে! শুধু দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া। এ পার্কের পাহাড়ের নিচে বিরাট এক গুহা। ঘোর অন্ধকারে ওই গুহার ভেতর কয়েকজন সহকর্মী আগুনের শিখা জ্বালিয়ে এক পথে ঢুকে অন্য পথ দিয়ে বেরিয়েছেন। মানবকণ্ঠের নোয়াখালী প্রতিনিধি লিয়াকত ভাইয়ের ভীতির কারণে কিছুটা এগোনোর চেষ্টা করেও মাঝপথ থেকে আমি ফিরে আসি।
ফের সবাই এ পাহাড়ের টিলার অন্যরকম বৈঠকখানায় বিশ্রাম নিই। এক পর্যায়ে সভাপতির পরামর্শে শুরু হলো নোয়াখালী প্রেস ক্লাব ঘোষিত কুপন ড্র। সেটাও ছিল ভিন্নরকমের অভিজ্ঞতায় ভরা। এখানে না থেকেও কুপনে বিজয়ীদের মধ্যে বাদল ভাই, সুজন ভাই ও মোজাম্মেল ভাই ছিলেন। তবুও উপস্থিত সবাই বিজয়ীর তালিকায় নাম না উঠাতে পারলেও একে অপরের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেওয়ার স্বচ্ছ মানসিকতার স্পষ্টতা পরিলক্ষিত হয়েছে।
আকাশ মো. জসিম