Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 8:41 pm

খাতভিত্তিক বাজেট সংস্থানে অতিরিক্ত কোটি টাকা ব্যয়

বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। নানা অনিয়মে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে প্রকল্পটি। এতে সরকারের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এ-সংক্রান্ত নানা তথ্য। এ নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের আজ থাকছে দ্বিতীয় পর্ব

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আরডিপিপি’র খাতভিত্তিক বাজেট সংস্থানে অতিরিক্ত কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। আরডিপিপিতে ১২টি অর্থনৈতিক খাতে ডিপিপি’র বছরভিত্তিক বাজেট সংস্থান থেকে এ ব্যয় করা হয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপি, ব্যয় বিবরণী, বরাদ্দ বিভাজন, বিল ভাউচার ও অন্যান্য রেকর্ডপত্র সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

সূত্রমতে, প্রকল্পের আরডিপিপিতে ১২টি অর্থনৈতিক খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট বাজেট সংস্থান ছিল ১৪ কোটি ৪৬ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় দেখানো হয়েছে ১৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে এক কোটি ৬৬ লাখ ১১ হাজার টাকা।

একই অর্থবছরের ডিপিপি’র খাতভিত্তিক ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি এবং বছরভিত্তিক অতিরিক্ত ব্যয়ের বিবরণী অনুযায়ী, ভ্রমণ ভাতা খাতে ডিপিপিতে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ থাকলেও প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যয় দেখানো হয়েছে ছয় লাখ টাকা। বাজেট সংস্থানে অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় এক লাখ টাকা। অনুরূপভাবে, প্রচার ও বিজ্ঞাপন খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল পাঁচ লাখ টাকা, ব্যয় দেখানো হয়েছে সাত লাখ আট হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় দুই লাখ আট হাজার টাকা। মৎস্য চাষি প্রশিক্ষণ খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা, ব্যয় দেখানো হয় ৪২ লাখ ৯২ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ১০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। অনিয়ম শ্রমিক খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৭০ হাজার টাকা, ব্যয় দেখানো হয় ৯০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ২০ হাজার টাকা।

অনুরূপভাবে পুনঃখননকৃত জলাশয়ে মাছের পোনা ও খাদ্য ক্রয় খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫৪ লাখ টাকা। ব্যয় দেখানো হয় ৭৯ লাখ ২৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ২৫ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি, পিআইসি কমিটি ও অন্যান্য কমিটির সম্মানী ভাতা খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল তিন লাখ টাকা, ব্যয় দেখানো হয় চাল লাখ ৪৮ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় এক লাখ ৪৮ হাজার টাকা। জাল বিনিময় খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৩০ লাখ টাকা, ব্যয় দেখানো হয় ৩২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা।

খাঁচা তৈরি এবং মাছ চাষ প্রদর্শনী খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৫০ হাজার টাকা, ব্যয় দেখানো হয় এক লাখ টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ৫০ হাজার টাকা। সরকারি বিল জলাশয় পুনঃখনন খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ৯৬ লাখ টাকা, ব্যয় দেখানো হয় ৯৯ লাখ আট হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় তিন লাখ আট হাজার ৯৭ টাকা। পুনঃখনন স্কিমের পানি সেচ খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ২০ লাখ টাকা। ব্যয় দেখানো হয় ২৬ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ছয় লাখ টাকা। পুনঃখনন স্কিমের পাড়ে ঘাস লাগানো খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যয় দেখানো হয় ১৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় চার লাখ ৮৭ হাজার টাকা।

পুনঃখনন স্কিমের পাড়ে বৃক্ষরোপণ খাতে ডিপিপিতে বরাদ্দ ছিল চার লাখ ১৩ হাজার টাকা। ব্যয় দেখানো হয় পাঁচ লাখ টাকা। অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয় ৮৭ হাজার টাকা। যদিও উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত ক্ষমতা অর্পণ আদেশ মোতাবেক ডিপিপি আরডিপিপিতে বাজেট বরাদ্দ থাকা সাপেক্ষে অর্থ ব্যয় করার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।

এদিকে প্রকল্প থেকে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কথা অস্বীকার করে ভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়ে বলা হচ্ছে, প্রকল্পের ডিপিপির বছরভিত্তিক সংস্থান মোতাবেক এডিপি বরাদ্দ পাওয়া যায় না। প্রতি বছরই ডিপিপি সংস্থানের চেয়ে কম এডিপি বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ফলে বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী কোনো খাতে কম আবার কোনো খাতে বেশি বরাদ্দ খরচ করা হয়। যে ১২টি খাতে অতিরিক্ত ব্যয়ের বলা হয়েছে, তা পূর্ববর্তী বছরে ওই খাতে কম খরচ করা হয়েছে। তাই মোট ব্যয় অপরিবর্তিত। কোনো খাতেই ডিপিপির সংস্থানের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়নি। এতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মন্তব্য হলো প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের এমন মন্তব্য আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয়। কারণ ডিপিপি আরডিপিপিতে উল্লিখিত খাতে বছরভিত্তিক বাজেট সংস্থান অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকলেও ডিসেম্বর ২০১৯ সাল পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি দেখানো হয় ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং ব্যয় দেখানো হয় ৭৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার পরও সাত কোটি ৪৯ লাখ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুছ সাত্তার বলেন, কোনো খাতেই অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়নি। ‘প্রতিবছর বরাদ্দ কম পাওয়ার পরও অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ব্যতীত প্রকল্পের বার্ষিক ভৌত অগ্রগতি কীভাবে কাগজে-কলমে শতাংশ হারে দেখালেন’ প্রকল্প পরিচালক এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, অতিরিক্ত কোনো অর্থই ব্যয় করা হয়নি।