Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:10 am

খাতভিত্তিক লেনদেনে সক্রিয় বিনিয়োগকারীরা

শেখ আবু তালেব: পূর্বের সপ্তাহের ধাঁচে লেনদেনের ধারাবাহিকতা গেছে গত সপ্তাহেও। বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল স্বল্প মূলধনি তথা এসএমই খাতের কোম্পানির প্রতি। এজন্য সিরামিক, ভ্রমণ, পেপার, সেবা, ট্যানারি খাতের শেয়ারের প্রতি ঝোঁক দেখা গেছে। গত সপ্তাহে নতুন করে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি। এসব খাত থেকে অনেকেই গত সপ্তাহে মুনাফাও তুলেছেন।

অপরদিকে এই সময়ে বৃহৎ খাতগুলোর শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কিন্তু এ খাত থেকে বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক কম গেইনার হয়েছেন। গত ১৫ জুলাই শেষ হওয়া ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন বিশ্লেষণে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

গত সপ্তাহ দেশের পুঁজিবাজারের প্রায় সব খাত ইতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে। কিন্তু বিমা খাত দুটিই নেতিবাচক ধারায় লেনদেন শেষ করেছে গত সপ্তাহে। বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, বিনিয়োগকারীরা এখন পুঁজি ও মুনাফা সংরক্ষণে বাজার বুঝেই বিনিয়োগ করছেন। এজন্য কোনো খাতে ঝুঁকি দেখলেই সতর্ক হয়ে পড়ছেন। বাজারের মৌলভিত্তির খাতের কোম্পানির দিকেই ঝুঁকছেন তারা। এজন্য বেছে নিচ্ছে বড় বা কখনও স্বল্প মূলধনি তথা এসএমই খাতের কোম্পানি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেশকিছু উদ্যোগ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ধরে রাখতেও সাহায্য করছে বলে জানান তারা। এজন্য সূচক ও বাজার মূলধন অব্যাহত বৃদ্ধির পরও কেউ আতঙ্কিত হচ্ছেন না। বিনিয়োগ তুলে নিচ্ছেন না। উল্টো মুনাফার টাকা ফের অন্য খাতের শেয়ারে বিনিয়োগ করছেন। এই আস্থা ধরে রাখতে পারলে লাভবান হবেন বিনিয়োগকারীরা। এমন প্রত্যাশাই করছেন তারা।

গত সপ্তাহে নতুন আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া মিউচুয়াল ফান্ডের কয়েকটির দর ইতোমধ্যেই ঝুঁকিপূর্ণ সীমায় চলে গিয়েছে। দাম বৃদ্ধির খবর পেয়ে অনেকেই ক্রয়াদেশ দিয়েছেন। আবার একটি অংশ বাজার পরিবেশ দেখে ক্রয়ের অপেক্ষা করছেন বলে জানা গেছে।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে অধিকাংশ শেয়ারের দর বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে শেয়ারের লেনদেনের পরিমাণও। ফলে এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে আট হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পূর্বের সপ্তাহের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। অপর দুটি সূচকের মধ্যে ডিএস৩০ বেড়েছে ২৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট ও ডিএসইএস বেড়েছে ১৭ দশমিক ৮১ পয়েন্ট। এই সময়ে ডিএসইতে মোট ৩৮১টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেনে অংশগ্রহণ করে। এরমধ্যে শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ২৬৭টির, কমে ৯৪টির, অপরিবর্তিত ছিল ১৬টির ও লেনদেন হয়নি চারটির।

তথ্য অনুযায়ী, শুধু লেনদেন ও বাজার মূলধন বৃদ্ধি নয় বিনিয়োগকারীরা পেয়েছেন মুনাফাও। গত সপ্তাহে সিরামিক খাতে ৯ শতাংশ, ভ্রমণ খাতে সাত দশমিক এক শতাংশ, পেপারে ছয় দশমিক চার শতাংশ, সেবায় ছয় দশমিক এক শতাংশ, ট্যানারি পাঁচ দশমিক ৯ শতাংশ ও মিউচুয়াল ফান্ডে চার দশমিক ৯ শতাংশ মুনাফা দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও প্রকৌশল খাতে দুই দশমিক চার শতাংশ, আইটিতে দুই দশমিক দুই শতাংশ ও বস্ত্র খাতে দুই দশমিক দুই শতাংশ গেইন দেখতে পান বিনিয়োগকারীরা।

বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস ধরেই বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধি পয়ে আসছে। কয়েকটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় অস্বাভাবিকভাবেই। এর কোনো যৌক্তিক কারণ খুঁজে পায়নি কেউ। নিয়ন্ত্রক সংস্থাও বিষয়টিতে একপ্রকার উদাসীনতার পরিচয়ই দিয়ে যাচ্ছেন। এরমধ্যে গত দুই সপ্তাহ ধরে কিছুটা কমেছে এ খাতের শেয়ারদর। তারপরও গত সপ্তাহে বিতর্কের জš§ দেয়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের শেয়ারের দাম বেড়েছে, যা ডিএসইতে গত সপ্তাহে শেয়ারদর বৃদ্ধির মধ্যে সর্বোচ্চ।

ডিএসইতে পূর্বের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে লেনদেন বৃদ্ধি পায় চার চার দশমিক ৬১ শতাংশ। এই সময়ে মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ ১৪ দশমিক চার শতাংশ অবদান রাখে সাধারণ বস্ত্র খাত। এরপরই ছিল ওষুধ খাত ১২ দশমিক ৯ শতাংশ, প্রকৌশল খাত ৯ দশমিক দুই শতাংশ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ ছয় দশমিক ছয় শতাংশ, সিরামিক তিন দশমিক চার শতাংশ, ব্যাংক ছয় দশমিক ৯ শতাংশ ও আইটি খাত দুই দশমিক দুই শতাংশ।

এদিকে একক কোম্পানি হিসেবে গত সপ্তাহ শেষে ডিএসইতে সর্বোচ্চ শেয়ারদর বৃদ্ধি হওয়া ১০টি কোম্পানি হচ্ছেÑসোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় ৩৭৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এরপরই রয়েছে সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড-০১, ফুওয়াং সিরামিক, বেঙ্গল উইন্ডশোর থার্মোপ্লাস্টিকস, শাইনপুকুর সিরামিকস, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্রোথ ফান্ড, জিকিউ বলপেন ইন্ডাস্ট্রিজ, রহিম টেক্সটাইল মিলস, এএফসি এগ্রো বায়োটেক ও এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড।

এই সময়ে শেয়ারদর হারানোর তালিকায় ছিল মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং, প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স, নিউ লাইন ক্লোথিংস, এস্কোয়্যার নিট কম্পোজিট, রেনউইক যজ্ঞেশ্বর অ্যান্ড কোং, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, মতিন স্পিনিং মিলস, ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স ও ইনডেক্স এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ।