সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: রমজান আসার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব দেখিয়ে ছোলাসহ ডাল-জাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। পরে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট অর্ধেকে নেমে আসায় বাজারে পণ্য সরবরাহ কমে গিয়েছিল। এতে দাম ধরে রাখার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু ৫-৬ রমজানের পর খাতুনগঞ্জ পাইকারি বাজারগুলো ক্রেতাশূন্য হওয়ায় ছোলার দাম কমতে শুরু করে। একই অবস্থা খেজুরের বাজারের। মূলত অতিরিক্ত সরবরাহের কারণে পণ্য দুটিতে ক্রেতা সংকট চলছে।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের ছোলার দাম কেজিপ্রতি পাঁচ-সাত টাকা কমেছে। বর্তমানে সাধারণ মানের ছোলা পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়। আর অস্ট্রেলিয়ার ভালো মানের ছোলা ৬৩ টাকা, যা খুচরায় ৭০ টাকা। পাইকাররা জানান, গত মার্চে যে ছোলার দাম ছিল কেজিপ্রতি ৬৭ টাকা, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ৬১-৬২ টাকায়। আর যেটার দাম ছিল ৬৪ টাকা, সেটাও বিক্রি হচ্ছে ৫৮-৬০ টাকায়। এছাড়া খুচরা বাজারে পাইকারের চেয়ে পাঁচ-সাত টাকা বেশিতে ছোলা বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে পাইকারিতে মানভেদে খেজুর কেজিপ্রতি ৭০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে ইরাকের জাহেদি খেজুর ১০ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিকেজির দাম ৯৪ টাকা। মাশরুক প্রতি কেজি ২০০ টাকা আর পাঁচ কেজি ওজনের কার্টন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। এছাড়া মাবরুম এক হাজার ৩০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে পাঁচ কেজি। আজোয়া পাঁচ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪০০ টাকায়। আর মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২৫০ টাকা করে। তবে ভালো মানের আজোয়া ও মরিয়ম খেজুরের দাম আরও বেশি। ১০ কেজি ওজনের নাগাল খেজুরের কার্টন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ টাকা করে। মিসর থেকে আসা ভালো মানের মেডজুল প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় এক হাজার টাকা করে।
অপরদিকে খুচরা বাজারে পাইকারির তুলনায় কিছুটা বেশি দামে খেজুর বিক্রি করতে দেখা গেছে। অধিকাংশ খুচরা দোকানে আলজেরিয়ার ফরিদা খেজুর ২৬০ টাকায়, মরিয়ম খেজুর ৬২০ টাকায়, ইরানি মরিয়ম খেজুর প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায়, নাগাল প্রতি কেজি ১৮০ টাকায়, আজোয়া প্রতি কেজি ৫৫০ টাকায়, জাহেদ প্রতি কেজি ১৪০ টাকায়, সাফাবি প্রতি কেজি ৪০০ টাকায় এবং আম্বার খেজুর প্রতি কেজি ৮০০ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
খাতুনগঞ্জের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, রমজানের আগে খুচরা বিক্রেতারা পণ্য মজুত করেন। তাই বাজারের চাহিদা বাড়ার কারণে রমজান শুরুর কয়েক মাস আগে থেকে নানা অজুহাতে দেশের বাজারে বাড়তে থাকে ছোলার দাম। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ করে ছোলায় বাজারে সরবরাহ বাড়তে থাকে। মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং রেট কমে যাওয়ায় বড় পাইকাররা দর পড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় পণ্য ছেড়ে দেয়ার জন্য বাজারের সরবরাহ বাড়িয়েছেন। এর পরপরই দাম কমতে থাকে। একই অবস্থা খেঁজুরের বাজারেও।
খেজুরের বাজার পরিস্থিতি ও দাম নিয়ে খাতুনগঞ্জ এলাকার আমদানিকারক আরাফাত রুবাই শেয়ার বিজকে বলেন, এবারের খেজুরের সরবরাহ আগের অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ কারণে আমদানিকারকদের লোকসানেও খেজুর বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদের ইরাকি জায়েদি খেজুর আমদানিতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ে প্রায় ৯৮ টাকা, কিন্তু বিক্রি করতে হচ্ছে ৯৩ টাকায়। এমনকি গত সপ্তাহে ৯৫ টাকা করে বিক্রি করেছি। আর রমজান শেষ হতে বেশি দিন নেই। দাম আরও কমার আশঙ্কা আছে।
অপরদিকে ছোলার বাজার নিয়ে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের বুকিং রেট প্রায় অর্ধেকে নেমে আসায় ছোলার দাম কমেছে। কিন্তু যাদের আগের আমদানি করা পণ্য আছে, তারা লোকসানে ছোলা বিক্রি করছেন। এখন ৫৮ টাকায় ছোলা বিক্রি করছি, তবুও ক্রেতা সংকট। বাজারে ছোলা এখন পর্যাপ্ত আছে। এছাড়া আমদানির পথে থাকা ছোলা দেশে এলে দাম আরও কমার শঙ্কা আছে। মূলত দেশের চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশ ছোলা অস্ট্রেলিয়া থেকে আসে। এর বাইরে সীমিত আকারে মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশ থেকেও কিছু ছোলা দেশে আসে।
প্রসঙ্গত, দেশে বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ মেট্রিক টন ছোলার চাহিদা থাকলেও শুধু রমজান মাসেই ইফতারের জন্য ছোলা বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ হাজার মেট্রিক টন। অপরদিকে গত ৯ মাসে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে দেশে খেজুর আমদানি হয়েছে ৭৪ হাজার ৮১ টন। আর ২০২০-২১ পুরো অর্থবছরে সমুদ্রবন্দর দিয়ে খেজুর এসেছিল ৪৪ হাজার ৬৮৮ টন। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০ হাজার টন বেশি। এছাড়া আরও কয়েক হাজার টন আমদানির পথে রয়েছে।