Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 6:08 pm

খাতুনগঞ্জে ভোগ্যপণ্যের বাজারে দরপতন

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: বিশ্ব এখন আক্রান্ত করোনাভাইরাসে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া। অজানা আশঙ্কায় লেনদেন কমছে। পাশাপাশি পণ্যের দাম হ্রাস পাচ্ছে কয়েকগুণ। এর প্রভাব পড়েছে দেশের ভোগ্যপণ্যের বড় পাইকারি বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসা-বাণিজ্যে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যের দামও অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু গত কদিনে বাজারে ক্রেতাসংকটে আতঙ্কে পণ্যভেদে প্রকৃত দামের চেয়েও ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমে বিক্রি করছেন পাইকাররা। অথচ আসন্ন রমজানের আগে বাজার থাকে চাঙ্গা।

খাতুনগঞ্জ-আসদগঞ্জ ও চাক্তাই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানান, এ সময় রোজা সামনে রেখে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের আমদানি হয়, যা দুই মাস আগে গোডাউনে মজুত হতে থাকে। আর শবেমেরাজের পর দেশের বিভিন্ন জায়গার খুচরা বিক্রেতারা কেনা শুরু করেন। এ লক্ষ্যে চলতি বছরও জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ছোলা, চিনি, সয়াবিন, পাম তেল, ডাল, চাল, মটরসহ অনেক ভোগ্যপণ্যের আমদানি ও সরবরাহ বাড়ছিল। গত এক সপ্তাহে এসব পণ্যের দাম ছিল ঊর্ধ্বগতিতে। কিন্তু গত তিন-চার দিন ধরে হঠাৎ করে বেচাকেনা অনেক কমে গেছে। এমনিতেই বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে অস্থিরতা চলছে। এতে এক মাসে  ছোলা, চিনি, সয়াবিন, পাম তেল, ডাল প্রভৃতির দাম কমেছে অনেক। আর অজানা আশঙ্কায় ক্রেতাসংকট দেখা দিয়েছে খাতুনগঞ্জ-আসদগঞ্জ ও চাক্তাই পাইকারি বাজারে। এতে করে পুঁজি হারানোর ভয়ে রয়েছেন এসব ব্যবসায়ী। 

গতকাল সরেজমিনে দেখা যায়, দুদিন আগে এলাচ, সয়াবিন, পাম তেল, ছোলা, ডালের দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। পাইকারিতে ২০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে ভোজ্যতেলের দাম। সিটি গ্রুপের সয়াবিন তেল ২০০ টাকা কমে মণপ্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে তিন হাজার ১০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ৩০০ টাকা। আর পামঅয়েলের দাম মণপ্রতি ৮০০ টাকা কমেছে। গতকাল প্রতিমণ পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ২০০ টাকা। এছাড়া সুপার পামঅয়েল মণপ্রতি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে আড়াই হাজার টাকা, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ১০০ টাকা।

একইভাবে পাইকারিতে চিনির দাম ১৯০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এস আলম ব্র্যান্ডের ৫০ কেজি চিনির ডিও বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২০৫ টাকা থেকে দুই হাজার ২১০ টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল দুই হাজার ৩৫০ টাকা। এতে বস্তাপ্রতি চিনির পাইকারি দাম পড়ছে দুই হাজার ৯৮৩ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল তিন হাজার ১৭৩ টাকা। ফলে পাইকারিতে গতকাল রোববার কেজিপ্রতি চিনির দাম ছিল ৫৯ টাকা ৬৭ পয়সা, যা এক মাস আগে ছিল ৬৩ টাকা ৪৫ পয়সা। আর রোজার প্রধান উপকরণ ছোলার দাম প্রতি মণ ২০৮০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ২৩০০ টাকা।

অপরদিকে চিড়ার দাম বাড়তির দিকে। বর্তমানে পণ্যটির দাম চলছে মণপ্রতি ১৮০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১৪০০ টাকা। এছাড়া মসুর ডালের দাম প্রতি মণ ১৮০০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ১৯৫০ টাকা। অপরদিকে গতকাল মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫-৫০ টাকায়। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার বিক্রি হয়েছিল ৫৫-৬০ টাকায়। মেহেরপুরের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২৮-৩০ টাকায়। কদিন আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৮ টাকা দরে। করোনার কারণে চায়না রসুনের দাম ১৪৫-১৫০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়। তবে আদার দাম কিছুটা বেড়েছে। চীন থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় ৮৫-৯০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১১০-১১৫ টাকায়।

আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে বিশ্বঅর্থনীতিতে মন্দাভাব চলছে। তার প্রভাব পড়েছে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্য বাজারেও। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে, অপরদিকে ক্রেতাসংকটে গত কদিন পণ্যের প্রকৃত দামের চেয়েও অনেক কমে বিক্রি হচ্ছে ভোগ্যপণ্য। এতে অনেক ব্যবসায়ীকে বড় ধরনের ক্ষতি গুনতে হবে।

খাতুনগঞ্জের তেলের ডিও ব্যবসায়ী আরএম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আলমগীর পারভেজ শেয়ার বিজকে বলেন, সব ধরনের তেলেরই দাম কমেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমায় দেশের বাজারেও পাইকারিতে কমেছে। পণ্যটি সরবরাহে কোনো ধরনের ঘাটতি নেই। তবে প্রতিনিয়ত দাম কমছে। এ অবস্থা কত দিন ধরে থাকবে বলা যায় না।

ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাবেক সভাপতি সোলাইমান আলম বাদশা শেয়ার বিজকে বলেন, এমনিতেই সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে বিভিন্ন ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম কমছে। এতে দেশের বাজারেও ছোলা, ডাল, তেল ও চিনির দাম কমে আসে। কিন্তু  কদিনে করোনা-আতঙ্কে দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের খুচরা ক্রেতারা পণ্যদ্রব্য কিনতে আসছেন না। এতে স্বাভাবিক দরের চেয়ে ১০-২০ শতাংশ কমে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। এভাবে হলে তো আমাদের ব্যবসায় লোকসান দিয়ে পথে বসতে হবে।