সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ৯ টাকায়। ভোক্তারা লাভবান হলেও লোকসানের মুখে পড়েছেন দেশি কৃষক। অপরদিকে পাইকারি হিসেবে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে।
গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের কাঁচাবাজার খাতুনগঞ্জে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আট থেকে ৯ টাকার মধ্যে। আর প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকায়। পাইকারিতে প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা দরে। এ হিসাবে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম পড়ে ৫২০ থেকে ৬০০ টাকা। ভারতীয় একই পেঁয়াজ শহরের বিভিন্ন খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতিমণ পেঁয়াজের দাম পড়ে এক হাজার ৪০ টাকা।
দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক এটিএম শামছুদ্দোহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি। এছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায়। আমাদের দেশি পেঁয়াজ বেশিদিন রাখা যায় না। পাশাপাশি ক্রেতারা ভারতীয় পেঁয়াজ বেশি ব্যবহার করেন।’
তিনি জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পরিবহন বাবদ ন্যূনতম তিন টাকা ব্যয় হয়। বিভিন্ন খরচ বাবদ চলে যায় কেজিতে আরও এক টাকা। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ থাকায় ক্ষেত্রবিশেষে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিকারক ও ব্যবসায়ী শফিউল ইসলাম বলেন, ‘পরিবহন ব্যয় বেশি থাকায় বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তুলনামূলক কম পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে।’
তিনি জানান, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বাজারে সরবরাহের জন্য প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৫ টাকায়, যা কেনা হয়েছিল ১৩ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি পেঁয়াজে পরিবহন বাবদ ব্যয় হয় তিন টাকা। এ হিসাবে গতকাল ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজি বিক্রিতে ৫০ পয়সা লোকসান গুনেছেন।
এদিকে ভরা মৌসুমে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দামে ব্যবধান দাঁড়িয়েছে সর্বোচ্চ ১০ টাকা।
এ প্রসঙ্গে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘কৃষক পর্যায়ে প্রতি কেজি পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কিন্তু তারা ১০ থেকে ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের কৃষক।’
তার মতে, ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্কারোপ করলে দেশের কৃষক লাভবান হতো।
স্থানীয় কৃষক আবদুল মালেক বলেন, ‘এ বছর এক বিঘা জমি থেকে ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। ৩০ মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। কিন্তু বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায়। সে হিসাবে ৩০ মণ পেঁয়াজ বিক্রি করে পাই ১৫ হাজার টাকা। ফলে লোকসান দিতে হচ্ছে পাঁচ হাজার টাকা। এভাবে বছরের পর বছর লোকসান দিতে থাকলে কৃষক পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।’
তাই দেশি পেঁয়াজের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পেঁয়াজ আমদানির দাবি জানান তিনি।