শেয়ার বিজ ডেস্ক: খাদ্যমূল্যের বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও কানাডার মূল্যস্ফীতি কমেছে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বরে দেশটির বার্ষিক মূল্যস্ফীতি কমেছে, তবে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। খবর: কানাডা টুডে।
সর্বশেষ কনজুমার প্রাইস ইনডেক্স বা ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) প্রতিবেদন অনুসারে, কানাডার পরিসংখ্যান বিভাগ জানিয়েছে, গত আগস্টে ৭ দশমিক শূন্য শতাংশ মূল্যস্ফীতি থেকে সেপ্টেম্বরে কিছুটা কমেছে। মূলত গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ৪ শতাংশ কমার কারণে এ সময় মূল্যস্ফীতি কমেছে।
তবে প্রদেশভেদে ভিন্ন পরিস্থিতি দেখা গেছে। যেমন ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে মূল্যস্ফীতি একই ছিল ৭ দশমিক ৭ শতাংশ, আগস্টে যা ছিল ৭ দশমিক ৩ শতাংশ।
এরই মধ্যে বার্ষিক ভিত্তিতে অর্থাৎ গত বছরের সাপেক্ষে ১৯৮১ সালের আগস্টের পর দ্রুতগতিতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এ সময় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৪ শতাংশ বাড়ে খাদ্যপণ্যের দাম।
পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য অনুসারে, টানা ১০ মাস ধরে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, আবহাওয়া পরিস্থিতি, সার ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার বিশেষ সামরিক অভিযানের কারণে দ্রুতগতিতে খাদ্যের দাম বাড়ছে।
অপরদিকে মজুরিও বাড়ছে, কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির তুলনায় তা ধীরগতির। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে গড় মজুরি বেড়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ বলে জানিয়েছে পরিসংখ্যান বিভাগ।
উচ্চ সুদহারের কারণে বাড়ির মালিক ও সম্ভাব্য ক্রেতারা মর্টগেজ বা বন্ধকী ঋণে জর্জর হয়েছেন। এছাড়া আবাসন খাতের অন্যান্য খরচও বেড়েছে।
শিক্ষা খাতেও ব্যয় বেড়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে সেপ্টেম্বরে। বার্ষিক ভিত্তিতে এ সময় তাদের টিউশন ফি বেড়েছে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। এছাড়া মাসের হিসাবে ভোক্তা মূল্য সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।
দ্য ব্যাংক অব কানাডা সিপিআইয়ের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে। আগামী বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক-পরবর্তী সুদহার ঘোষণা দেবে। এজন্য মূল্যস্ফীতির প্রধান কারণগুলো পর্যালোচনা করছে তারা। নাজুক খাতগুলোয় মনোযোগ দেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি স্থিতিশীল রাখার জন্য ও কমানোর জন্য ভর্তুকির পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে উচ্চ সুদহার ঘোষণা করতে পারে তারা।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ভুগছে প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রও। গত জুনে ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয় দেশটিতেÑ৯ দশমিক ১ শতাংশ। আগস্টে তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ৩ শতাংশে। পরে সেপ্টেম্বরে তা আরও কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৮ দশমিক ২ শতাংশে। তবে এখনও তা পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রে মুদি পণ্যের দাম ১৩ শতাংশ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বাড়ি ও চিকিৎসা খরচও বাড়তির দিকে। এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির রাশ টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধি করছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে মন্দাভাব। মন্দাভাবের কারণে আবার জ্বালানি তেলের চাহিদা কমেছে। এতে মূল্যস্ফীতির হার কমতির দিকে।
চলতি বছর কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচবার সুদহার বাড়িয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে। সুদহার বাড়ানোর অর্থ কানাডার নাগরিক ও ব্যবসায় খরচ বেড়েছে, যা অর্থনীতির গতি ধীর করেছে। ব্যাংক অব কানাডা মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষ মূল্যস্ফীতি দুই শতাংশে নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তবে এ সুদহার বৃদ্ধির প্রভাব বুঝতে কিছুটা সময় লাগবে। অন্যথায় উচ্চ সুদহার আবাসন খাতে ধস নামাবে। গত ফেব্রুয়ারিতে বাড়ির দাম বেড়ে যাওয়ার পর এ খাতে স্থবিরতা চলছে।