খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য ফের খুলছে ইউক্রেনের বন্দরগুলো

শেয়ার বিজ ডেস্ক: টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। রুশ এ আগ্রাসনের কারণে ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো কার্যত অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে এবং এতে বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলোকে শস্য রপ্তানির জন্য পুনরায় খুলে দিতে একটি চুক্তি সই করেছে রাশিয়া ও ইউক্রেন। গতকাল শুক্রবার এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এর ফলে বিশ্বজুড়ে সৃষ্ট খাদ্যসংকট লাঘব হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর: ডেইলি সাবা, রয়টার্স।

বাংলাদেশ সময় গতকাল সন্ধ্যায় তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা এ সংক্রান্ত একটি চুক্তি সই করেন। জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন এ বৈঠকে মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস উপস্থিত ছিলেন। তাছাড়া মধ্যস্থতাকারী তুরস্কের শীর্ষ নেতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিতি ছিলেন।

এর আগে বৃহস্পতিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র ইব্রাহিম কালিন এক টুইট বার্তায় জানান, ‘শস্য রপ্তানি চুক্তি, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ইস্তাম্বুলে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট রেসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেসের পৃষ্ঠপোষকতায় ইউক্রেনীয় ও রাশিয়ান প্রতিনিধিদের চুক্তি সই হবে।’

এদিকে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে দেয়া ভিডিও ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউক্রেনের কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলোকে শস্য রপ্তানির জন্য পুনরায় খুলে দেয়া হতে পারে।

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়ান সৈন্যরা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী স্থল, আকাশ ও সমুদ্রপথে ইউক্রেনে এই হামলা শুরু করে। একসঙ্গে তিন দিক দিয়ে হওয়া এই হামলায় ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র পড়েছে বৃষ্টির মতো।

ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পরপরই কৃষ্ণসাগরে রুশ নৌবহরের অবরোধের ফলে সারা বিশ্বের বাজারে শস্য সরবরাহ কমে যায়। আর এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

আঙ্কারা বলেছে, গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে জাতিসংঘের নেতৃত্বাধীন পরিকল্পনার বিষয়ে একটি সাধারণ সমঝোতা হয়েছে এবং এখন সংশ্লিষ্ট পক্ষরা তা লিখিত আকারে প্রকাশ করবেন। ওই সমঝোতার বিস্তারিত তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে শুক্রবার দোলমাবাচে প্রাসাদের দপ্তরে বেলা দেড়টায় (জিএমটি) এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা রয়েছে।

উল্লেখ্য, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই বিশ্বের গম সরবরাহকারী প্রধান দু’টি দেশ। তবে মস্কো ২৪ ফেব্রুয়ারি তার প্রতিবেশী দেশে হামলা চালানোর পর খাদ্যের মূল্য বেড়েই চলেছে এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য সংকট শুরু হয়েছে।

গম রপ্তানির স্বার্থে মাইন সরাবে ইউক্রেন: কৃষ্ণ সাগর দিয়ে বিশ্ববাজারে গম রপ্তানিতে রাজি হয়েছে ইউক্রেন। কিয়েভের তিনটি সরকারি সূত্রের বরাতে শুক্রবার এ খবর ছেপেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জানিয়েছেন, রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী মাইনগুলোর ‘কয়েকটি’ সরিয়ে ফেলবে কিয়েভ।

প্রতিবেদন বলছে, বিদেশি ক্রুরা জাহাজটিকে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে নিয়ে যাবে। সেখান থেকে তারা অন্যান্য গন্তব্যে যাবে। অপারেশন তত্ত্বাবধানের জন্য ইস্তাম্বুলে একটি নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। তুর্কি কর্মকর্তারা মস্কোকে আশ্বস্ত করতে জাহাজগুলো পরীক্ষা করবেন; তারা নিশ্চিত করবেন এগুলো ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহে ব্যবহার হচ্ছে না।

দুই জ্যেষ্ঠ ইউরোপীয় কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইস্তাম্বুলে জাতিসংঘের আলোচনায় একটি চুক্তি হবে বলে তারা আশাবাদী।

ইউক্রেনে শক্তি হারাতে যাচ্ছে রাশিয়া: এদিকে ব্রিটেনের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স প্রধান বলেছেন, ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে হিমশিম খাবে রাশিয়া এবং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী পাল্টা হামলা চালাতে হয়তো সক্ষম হবে। বিরল প্রকাশ্য অনুষ্ঠান আসপেন সিকিউরিটি ফোরামে দেয়া বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এমআইসিক্স প্রধান রিচার্ড মুর বলেছেন, ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রারম্ভিক লক্ষ্য অর্জনে রাশিয়া চূড়ান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার মধ্যে রয়েছে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে উৎখাত, কিয়েভ দখল এবং পশ্চিমাদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০