খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে পোয়াবারো কারগিল পরিবারের

শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে খাদ্যের দাম। এতে শাপে বর হয়েছে বিশ্বের অতি ধনী পরিবার কারগিলের তিন সদস্যের। তারা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ খাদ্য প্রস্তুতকারক কারগিল কোম্পানির স্বত্বাধিকারী। খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ ধনীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন তারা। খবর: দ্য গার্ডিয়ান।

তিন ভাইবোন জেমস কারগিল, অস্টিন কারগিল ও ম্যারিয়ানে লিয়েবম্যানের দাদা উইলিয়াম ওয়ালেস কারগিল ১৮৬৫ সালে কারগিল ফুড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সপ্তাহে তিন ভাইবোন একসঙ্গে ব্ল–মবার্গ বিলিয়নিয়ার তালিকায় স্থান পেয়েছেন। তাদের একেকজনের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৪১০ কোটি ডলার। তালিকায় এর আগে স্থান করে নেন কারগিল পরিবারের অন্য দুই সদস্য পলিন কিনাথ ও ওয়েন্ডোলিন সনথেইম মেয়ার। তাদের দুইজনের সম্পদের

পরিমাণ ৮৫০ কোটি ডলার করে। এই পরিবারের আরও তিন সদস্য অ্যালেক্সান্দ্রা ডেইচ, সারাজ ম্যাকমিলান ও লুসি স্টিটজারও বিলিওনিয়ার। পুরো পরিবারটি কারগিল কোম্পানির ৮৭ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এটি বিশ্বের ১১তম ধনী পরিবার (যুক্তরাষ্ট্রে চতুর্থ), যাদের সমষ্টিগত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি ডলার।

৭০টি দেশে বিস্তৃত কারগিল ফুড কোম্পানির শাখাগুলোয় কর্মরত রয়েছেন ১ লাখ ৫৫ হাজারের বেশি কর্মী। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অফিস যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে। গত বছরের মতো চলতি বছরও রেকর্ড মুনাফার আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি। গত বছর কভিড-১৯ মহামারিতে রেকর্ড ৫০০ কোটি ডলার মুনাফা করে কারগিল।

চলতি মাসে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানায়, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে খাদ্যের দাম বেড়েছে, যা মার্চে ‘সর্বোচ্চ পর্যায়ে’ ছিল। এফএও বলেছে, তাদের খাদ্য মূল্যসূচক ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে ১৫৯ দশমিক ৩ পয়েন্টে দাঁড়ায়। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ১৪০ দশমিক ৭ শতাংশ। এ হিসেবে ১৯৯০ সালে এই সূচক প্রবর্তনের পর এটাই নতুন সর্বোচ্চ স্তর। এর মধ্যে উদ্ভিজ্জ তেল ও শস্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সংস্থা জানায়, সিরিয়াল, উদ্ভিজ্জ তেল ও মাংসের দাম সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে এমন এক অঞ্চল থেকে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে, যা বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ গম উৎপন্ন করে।

কারগিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডেভিড ম্যাকলেনান বলেন, পুতিনের আক্রমণ শুরুর আগেই খাদ্যের দাম চড়া, যা পুরো ২০২২ সাল জুড়ে বাড়তে থাকবে। কারগিল কর্তৃপক্ষ জানায়, গত বছর তাদের আয় বাড়ে ৬৩ শতাংশ, যা ১৫৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ সময় রাজস্ব আয় বাড়ে ১৭ শতাংশ।

দাতব্য সংস্থা অক্সফাম আমেরিকার কৃষিবিষয়ক উপদেষ্টা এরিক মুনেজ বলেন, এখনও দেখতে পাচ্ছি খাদ্যের দাম বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতির কারণে বিশ্বের নিন্মআয়ের মানুষ আরও ঝুঁকিতে পড়ছেন। খাদ্যের অতিরিক্ত দাম এবং কভিড-১৯ মহামারি ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, কেনিয়া ও দক্ষিণ সুদানের মতো দেশগুলোর নাগরিকদের ঝুঁকিতে ফেলেছে। অথচ একই সময় ধনী পরিবারগুলোর সদস্যদের আয় বাড়ছে। এই বৈষম্য বন্ধ হওয়া উচিত। জীবন বাঁচাতে এখনই পদক্ষেপ নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। ভঙ্গুর খাদ্য ব্যবস্থা ও অন্য কারণগুলোকে মোকাবিলা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে সংকট কাটিয়ে ওঠা যায়।

ব্রিটিশ উদ্যোক্তা ও প্যাট্রিওটিক মিলিওনেয়ারস ইউকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জেমা ম্যাকগ বলেন, কারগিল পরিবারের সম্পদ বৃদ্ধির এই চিত্র বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য আরও একটি

‘অদ্ভুত উদাহরণ’। নানা সমস্যায় বিদ্ধ বিশ্ব, এর সব সমাধান করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকারগুলো। তাই ক্ষুধার্ত ও দারিদ্র্য পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়াতে পারছে না তারা। এমনকি অযাচিত সম্পদ বৃদ্ধি ঠেকাতেও ব্যর্থ তারা। তবে অর্থনীতির স্বার্থে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ধনীদের ওপর আরও করারোপ করা উচিত।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০