নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই শতাংশের বেশি ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (টিএফএ বা অসম্পৃক্ত চর্বি) থাকা কোনো খাদ্যদ্রব্য বিক্রি, বিতরণ, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন ও আমদানি করা যাবে না। এমন নিয়ম রেখে খসড়া খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ প্রবিধানমালা, ২০২১ প্রণয়ন করেছে সরকার। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ খসড়াটি প্রণয়ন করেছে। এখন খসড়াটির বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের মতামত নিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ।
ট্রান্স ফ্যাট এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি, যা ডালডা কিংবা বনস্পতি ঘি নামে আমাদের দেশে পরিচিত। এটাকে পারশিয়ালি হাইড্রোজেনেটেড অয়েলও (পিএইচও) বলা হয়। এছাড়া উচ্চ তাপমাত্রায় দাহ্যতেল বা চর্বিও ট্রান্স ফ্যাটে রূপান্তরিত হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী, খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা দুই শতাংশ। কিন্তু আমাদের দেশে তেলজাতীয় খাদ্যে এ মাত্রা অনেক বেশি।
খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়, চর্বির ইমালসনসহ যে কোনো তেল ও চর্বি, যা এককভাবে বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের অংশ বা যে কোনো খাদ্যের অংশ, যা মানুষের খাওয়ার উদ্দেশ্যে বা খাওয়ার উদ্দেশ্যে অনুমোদিত এমন ক্ষেত্রে এ প্রবিধানমালা প্রযোজ্য হবে।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, মোড়কাবদ্ধ খাদ্য, মোড়কবিহীন খাদ্য, সরাসরি আহার্য খাদ্য (রেডি-টু-ইট) বা যে কোনো খাদ্য এবং খাদ্য প্রস্তুতের জন্য ব্যবহƒত কাঁচাপণ্যের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য হবে। তবে রুমিন্যান্টজাত (জাবরকাটা প্রাণী থেকে আসা) ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড (আরপি-টিএফএ), প্রাণীর চর্বিতে প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বা অন্য কোনো আইনের অধীন পরিচালিত খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রবিধানমালা প্রযোজ্য হবে না।
খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডের সর্বোচ্চ মাত্রার বিষয়ে প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, রুমিন্যান্টজাত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়া চর্বির ইমালসনসহ যে কোনো তেল ও চর্বি, যা এককভাবে বা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের বা যে কোনো খাদ্যের অংশ, যা মানুষের আহার্যের উদ্দেশ্যে বা মানুষের আহার্যের উদ্দেশ্যে অনুমোদিত বা খুচরা ব্যবসা, ক্যাটারিং ব্যবসা, রেস্তোরাঁ, প্রতিষ্ঠান, বেকারি বা যেকোনো খাদ্য স্থাপনার খাদ্য প্রস্তুতের জন্য কাঁচাপণ্য হিসেবে ব্যবহƒত হয়, যাতে দুই শতাংশের (প্রতি ১০০ গ্রামে দুই গ্রাম) বেশি ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান, তা বিক্রি, বিতরণ, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন, আমদানিসহ কোনোরূপ খাদ্য ব্যবসা করা যাবে না।
রুমিন্যান্টজাত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড ছাড়া দুই শতাংশের (প্রতি ১০০ গ্রামে ২ গ্রাম) বেশি ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, এমন প্রক্রিয়াজাত, মোড়কাবদ্ধ, সরাসরি আহার্য খাদ্য বিক্রি, বিতরণ, সংরক্ষণ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন, আমদানিসহ এ ধরনের খাদ্যের ব্যবসা করা যাবে না।
দুই শতাংশের (প্রতি ১০০ গ্রামে দুই গ্রাম) বেশি প্রাণিজ উৎস্যজাত ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহার করলে সংশ্লিষ্ট খাদ্য ব্যবসায়ী প্রমাণ দাখিল করতে বাধ্য থাকবেন বলে প্রবিধানমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, বাধ্যতামূলকভাবে মোড়কাবদ্ধ খাদ্যের লেবেলে ২০১৭ সালের মোড়কাবদ্ধ খাদ্য লেবেলিং প্রবিধানমালা অনুযায়ী ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড-সম্পর্কিত তথ্যাদি ঘোষণা করতে হবে।
যদি কোনো খাদ্যে আংশিকভাবে হাইড্রোজেনেটেড তেল (পিএইচও) ব্যবহƒত হয়, তবে এর নির্দিষ্ট পরিমাণসহ তথ্যাদি মোড়কাবদ্ধ খাদ্যের লেবেলিংয়ের উপাদান তালিকায় উল্লেখ করতে হবে। পিএইচওর সংমিশ্রণে গঠিত কোনো খাদ্য উপকরণ (যেমন শটেনিং বা মার্জারিন) কাঁচাপণ্য হিসেবে ব্যবহƒত হলে পিএইচওর পরিমাণ-সংক্রান্ত তথ্যাদি সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। তবে উপাদান তালিকায় পণ্যটি নন-হাইড্রোজেনেটেড বা আন-হাইড্রোজেনেটেড এমন তথ্য প্রকাশ করা যাবে না।
মোড়কীকরণ, লেবেলিং, বিপণন বা বিজ্ঞাপনে কোনো খাদ্যপণ্য টিএফএমুক্ত, এমন দাবি করা যাবে না।
খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিড নির্ধারণের জন্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত, বিশ্বাসযোগ্য ও ধারাবাহিকভাবে পুনরুৎপাদনযোগ্য হতে হবে। খাদ্যোপকরণে টিএফএর পরিমাণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে ডব্লিউএইচও প্রটোকল ফর মেসারিং ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডস ইন ফুডস অনুসরণসহ ইন্টারন্যাশনাল অরগানাইজেশন ফর স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন (আইএসও), অ্যাসোসিয়েশন অব অফিসিয়াস অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট (এওএসি), আমেরিকান অয়েল কেমিস্ট সোসাইটি (এওসিএস), ইন্টারন্যাশনাল ডেইরি ফেডারেশন (আইডিএফ) ও কোডেক্সের সময়ে সময়ে হালনাগাদ করা বিশ্লেষণ পদ্ধতি রেফারেন্স হিসেবে অনুসৃত হবে।