সারা বিশ্বেই উৎপাদিত খাদ্যের বিরাট একটা অংশ নষ্ট ও অপচয় হয়। বাংলাদেশেও খাদ্য উৎপাদন থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে খাদ্য নষ্ট হয়। যা একদিকে খাদ্য নিরাপত্তায় অন্যদিকে কৃষকের আয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর মধ্যে চলমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে বাংলাদেশে খাদ্যের অনেক সমস্যা দেখা দিয়েছে। পৃথিবীর অভাগা মানুষ কি কখনো ক্ষুধার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে না? ২০১৭ সালের আন্তর্জাতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিলের ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑবছরে বিশ্বের প্রায় ১১ শতাংশ মানুষের ক্ষুধা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের বরাত দিয়ে গত বছর দেশের একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়Ñইয়েমেন, আফগানিস্তান, সিরিয়া ও দক্ষিণ সুদানসহ বিশ্বের দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলগুলোয় কভিড মহামারির কারণে খাদ্য সংকট আরও বেড়েছে। এর প্রভাব থেকে মধ্যম আয়ের দেশগুলোও বাদ যায়নি। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে মহামারির কারণে লাখ লাখ মানুষ না খেয়ে থাকার পর্যায়ে নেমে এসেছে।
জাতিসংঘের তথ্য মতে, মানুষের জন্য উৎপাদিত খাবারের মধ্যে অপচয় হয় ১৩০ কোটি টন (মোট উৎপাদনের এক-তৃতীয়াংশ)। খাবারের অপচয় রোধে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে; কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে আমাদের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও আন্তরিকতা কতটুকু? অনেক বাড়িতে প্রতিবেলায় এত এত খাবার রান্না হয় যে, খেতে না পারার কারণে পরে তা ফেলে দিতে হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বজুড়ে বছরে মোট খাবারের ১৭ শতাংশ রেস্তোরাঁ ও দোকানে অপচয় হয়। আমাদের আরেকটি অভ্যাসে ভীষণ অবাক হই-খাওয়ার টেবিলে হরেক রকমের সুস্বাদু খাবার পরিবেশিত হলে পেট ভরে যাওয়ার পরও চোখের ক্ষুধা সামলাতে না পেরে অনেকে প্লেটে খাবার তুলতেই থাকে। পরে খেতে না পেরে ওইসব খাবারের জায়গা হয় বনপ্লেটে। এফএও’র তথ্যমতে, উৎসবের দিনগুলোতে এ অপচয়ের পরিমাণ আরও বেড়ে যায়।
বাংলাদেশে কী পরিমাণ খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয় তার সুনির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও কয়েকটি গবেষণায় দেখা যায়, শাকসবজি ও ফলমূলে পোস্টহার্ভেস্ট নষ্ট বা অপচয়ের পরিমাণ ৩০-৪০ শতাংশ, বার্ষিক আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে প্রায় ৪৯ কোটি মার্কিন ডলার বা ৩৪৪২ কোটি টাকা। মাঠে ফসল বোনা, পরিচর্যা, ফসল কাটা, প্রক্রিয়াজাত করা, দোকানে পৌঁছানো, ক্রেতার কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই খাদ্য নষ্ট বা অপচয় হয়, যা এখন বৈশ্বিক উদ্বেগের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেজন্য কোনোভাবেই খাদ্য নষ্ট ও অপচয় করা যাবে না। আমাদের খাদ্য বিলাসিতা থেকে সরে আসার চেষ্টা করতে হবে। ‘প্রয়োজন’কে সীমিত পর্যায়ে নিতে আসতে হবে। ব্যক্তি সতর্কতাও খাদ্য অপচয় রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
সাকিবুল ইসলাম
শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়