নিজস্ব প্রতিবেদক : খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও, খাদ্যের নিরাপদ মান উন্নয়নে কার্যক্রম ও অগ্রগতি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। ফলে অনেকে অর্গানিক, জৈব উপায়ে কৃষি উৎপাদন করলেও, ভোক্তারা মান নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগেন। যার ফলে অর্গানিক কৃষিজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জৈব কৃষির উৎপাদন ও বাজার আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
অনিরাপদ খাদ্য উৎপাদন ও বাজারজাত নিয়ন্ত্রণ করতে সব খাদ্য ও পানীয় নিয়মিত পরীক্ষা ও জনসমক্ষে তা প্রকাশ করা জরুরি। খাদ্যের মানের ব্যাপকভিত্তিক পরীক্ষা না হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা কঠিস। জনস্বাস্থ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সব খাদ্য ও পানীয় নিয়মিত পরীক্ষা ও ফলাফল প্রকাশ করা সময়ের দাবি। তাই পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাসফ ও বারসিকসহ ১৪টি সংগঠনের উদ্যোগে গতকাল জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জনস্বাস্থ্য ও রপ্তানি বৃদ্ধির স্বার্থে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত কর’ দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের (নাসফ) সভাপতি মো. হাফিজুর রহমান ময়নার সভাপতিত্বে ও পবা’র সম্পাদক এমএ ওয়াহেদের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পবা’র চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, পবা’র সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান, সম্পাদক ফেরদৌস আহম্মেদ উজ্জ্বল, নাসফের সাধারণ সম্পাদক মো. তৈয়ব আলী ও বারসিক’র সমন্বয়ক মো জাহাঙ্গীর আলম।
বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ আয়তনে ছোট ও দুর্যোগপূর্ণ দেশ হলেও বর্তমানে ধান, মাছ ও সবজি ইত্যাদি উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলোর কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রচলিত ও প্রায় অনিয়ন্ত্রিত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকভিত্তিক উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনার দাপটে অর্গানিক জৈব কৃষিজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও জৈব কৃষির উৎপাদন ও বাজার আশানুরূপ বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
ফসলে কীটনাশকের ব্যাপক অপপ্রয়োগ এবং মাত্রাতিরিক্ত সার ব্যবহারে খাদ্য দূষিত হচ্ছে। এছাড়া ফরমালিন, ক্যালসিয়াম, কার্বাইড, ইথোফেন, কীটনাশক, কাপড়ের রং, পোড়া তেল ও মবিলসহ খাদ্যে নানা ধরনের বিষাক্ত রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে।
এর ফলে প্রায় সব খাদ্য ও পানীয়তে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। দেশে প্রতি বছর দেড় লাখ মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে মারা যায় ৯১ হাজার ৩০০ জন। কিডনি জটিলতায় দেশে ২০১৯ সালে যত মানুষ মারা গেছেন, তার প্রায় তিনগুণ মানুষ মারা গেছেন ২০২০ সালে। ২০২০ সালে কিডনি সংক্রান্ত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৭ জন। বাংলাদেশে প্রতি বছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হƒদরোগে মারা যায়। যার ৪ দশমিক ৪১ শতাংশের জন্য দায়ী ট্রান্সফ্যাট। বিশেজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরনের রোগ এবং মৃত্যুর অন্যতম কারণ হচ্ছে খাদ্য ও পানীয়তে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি। ফলে জনস্বাস্থ্য আজ মারাত্মক হুমকির মুখে।
বক্তারা আরও বলেন, জমির মাটি থেকে খাবার থালা অবধি খাদ্য নিরাপদ হওয়া জরুরি। খাবার নিরাপদ কিনা এ নিয়ে নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষাটাও জরুরি। আমরা যেমন খাবারে কোনো ভেজাল চাই না, তেমনি আবার ফরমালিন-কার্বাইড বা ক্ষতিকর কোনো উপাদান খাবারে মিশে থাকুক তাও চাই না। আবার খাদ্য উৎপাদনের পরিবেশ এবং কোন শস্য থেকে খাদ্য উৎপাদিত হচ্ছে তাও পরখ করে দেখতে চাই। প্রতিদিন দেশে কমছে কৃষিজমি এবং প্রাকৃতিক পানির উৎসস্থলগুলো। আমরা কৃষিজমি ও জলাভূমিকে বাঁচাতে পারছি না।