খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা দেখছেন না খাদ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ ও দাম নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হলেও চলতি অর্থবছর দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো শঙ্কা দেখছেন না খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে অঙ্ক করে তিনি দেখিয়েছেন, জনসংখ্যার হিসাবে যে চাহিদা, তার চেয়ে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বেশি হওয়ার কথা। স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।

সরকারি দলের সদস্য আলী আজমের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী জানান, দেশে ২০২০-২১ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের কোনো ঘাটতি ছিল না। ২০২১-২২ অর্থবছরেও ঘাটতি হওয়ার ‘কোনো আশঙ্কা নেই’। তার দেয়া হিসাব অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষি মন্ত্রণালয় ৪০৭ দশমিক ০৭ লাখ টন (৩৯৪ দশমিক ৮১ লাখ টন চাল এবং ১২ দশমিক ২৬ লাখ টন গম) খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে (এইচআইইএস-২০১৬) অনুসারে মানুষের দৈনিক গড় খাদ্যশস্য গ্রহণের পরিমাণ ৩৮৭ গ্রাম (চাল ৩৬৭ দশমিক ২ গ্রাম এবং গম ১০ দশমিক ৮ গ্রাম)। সে হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬৯ দশমিক ৩০ মিলিয়ন ধরলে (প্রাক্কলিত) মোট খাদ্যশস্যের প্রয়োজন ছিল ২৩৯ দশমিক ১৪ লাখ টন (চাল ২২৬ দশমিক ৯০ লাখ টন এবং গম ১২ দশমিক ২৪ লাখ টন), যা ২০২০-২১ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের মোট উৎপদানের তুলনায় কম।

আবার দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এক দশমিক ৩৭ শতাংশ বিবেচনা করলে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি দেশের মোট জনসংখ্যা দাঁড়াবে ১৭১ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন (প্রাক্কলিত)। সে হিসাবে দেশে খাদ্যশস্যের মোট চাহিদা হবে ২৪২ দশমিক ৩০ লাখ টন। সেটাও ২০২১-২২ অর্থবছরের খাদ্যশস্য উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। এ হিসাব থেকে মন্ত্রী উপসংহার টানছেন, ‘দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।’

সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ মমতা হেনার প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী ১ এপ্রিল থেকে অভ্যন্তরীণ গম সংগ্রহ এবং ২৮ এপ্রিল থেকে বোরো সংগ্রহের মৌসুম শুরু হবে।

বিএনপির মোশারফ হোসেনের প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন বোরো মৌসুমে সরকার সাড়ে ছয় লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল এবং ৫০ হাজার টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

এদিকে সরকারি দলের শফিউল ইসলামের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নানামুখী পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।

জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রায়ই নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর দাম হঠাৎ করে ঊর্ধ্বমুখী হয়ে যায়। এর কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি। অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে উৎপাদন ব্যাহত হলেও দেশের বাজারে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়।

সরকারি দলের সাংসদ এম আব্দুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সম্প্রতি দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে।’

এদিকে সরকারি দলের এবাদুল করিমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির পরিমাণ ৪৫ হাজার ৩৬৭ দশমিক ১৯ মিলিয়ন ডলার এবং আমদানির পরিমাণ ৬১ হাজার ৬০৯ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলার। তাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ২৪২ দশমিক ০১ মিলিয়ন ডলার। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০