খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধে উদ্যোগ নিন

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত খানা আয়-ব্যয় জরিপের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার। এতে বলা হয়েছে, জরিপে উঠে এসেছে, দেশের জনসংখ্যার ২১ দশমিক ১১ শতাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। এদের মধ্যে ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ সহনীয় মাত্রার দুশ্চিন্তায় থাকেন। আর এক দশমিক ১৩ শতাংশ চরম মাত্রায় দুশ্চিন্তায় থাকেন।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) সংজ্ঞা অনুযায়ী, কোনো মানুষ সহনীয় মাত্রার বা মধ্যম মানের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় থাকার অর্থ হচ্ছে এসব মানুষ খুব বেশি ক্ষুধার্ত নাও থাকতে পারেন। তবে তারা নিয়মিত পর্যাপ্ত খাবার ও পুষ্টিকর খাবার পান না। ফলে তারা অপুষ্টি ও দুর্বলতার কারণে স্বাস্থ্যহানির ঝুঁকিতে থাকেন। বাংলাদেশে এমন মানুষের অনুপাত ১৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। আর চরম মাত্রায় খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকেন ১ দশমিক ১৩ শতাংশ মানুষ, যারা ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যান।  অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদণ্ড অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অপুষ্টির ‘খুব বেশি প্রকোপ’ থাকা ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী প্রায় ৩০ দশমিক ২ শতাংশ শিশু অপুষ্টির শিকার।

খানা আয়-ব্যয় জরিপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জরিপ। এই জরিপের তথ্য দিয়েই পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যবর্তী মূল্যায়ন করা হয়। এ জরিপে জরিপে মূলত আয় দারিদ্র্য নিরূপণ করা হয়। তাই জরিপ প্রতিবেদনের আলোকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত।

মানুষের মৌলিক চাহিদার মধ্যে প্রথমটিই হলো খাদ্য। দেহের বৃদ্ধি গঠন ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে খাদ্য অপরিহার্যÑএমন কথা কমবেশি সবাই জানি। এও জানি জনসংখ্যা তখনই সম্পদ হিসেবে পরিগণিত যখন তাদের বেশির ভাগ সুস্থ সব প্রজন্ম হিসেবে গড়ে ওঠে। স্বীকার করতে দ্বিধা থাকার কথা নয় যে, আমাদের প্রবাসী জনশক্তির বেশির ভাগই কায়িক শ্রম দিচ্ছে। কারিগরি ও কর্মমুখী শিক্ষা কিংবা আত্মকর্মসংস্থানে জীবিকা নির্বাহের কথা বলা হোক, প্রতিটি পেশায় কমবেশি কায়িক শ্রমনির্ভর। খাদ্য নিরাপত্তা না থাকলে সবল প্রজন্ম, জনশক্তি গড়ে তোলা সম্ভব নয়। যেখানে জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশই খাবারে সংস্থা নিয়ে শঙ্কিত, সেখানে একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী জনশক্তি গড়ে তোলা বড় চ্যালেঞ্জই বটে। সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও দেহকে কর্মক্ষম রাখার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাবারের বিকল্প নেই। সবার উচিত খাদ্যতালিকায় খাদ্যের সব উপাদান সংবলিত খাদ্য গ্রহণ করা।

খাদ্য নিরাপত্তা বলতে বোঝায় খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খাদ্য নিরাপত্তার তিনটি প্রধান বিষয় নির্ধারণ করেছেÑ খাদ্যের পর্যাপ্ততা, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং খাদ্যের ব্যবহার-অপব্যবহার। চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের সরবরাহ থাকাকে বলা হয় খাদ্যের সহজলভ্যতা। খাদ্য কেনার সামর্থ্য হলো খাদ্য গ্রহণের সামর্থ্য। প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ ন্যূনতম খাদ্য গ্রহণেই গলদঘর্ম হচ্ছে, পুষ্টিকর খ্যাদ্য গ্রহণ তো পরের কথা। সামাজিক সুরক্ষা সেবার আওতায় যেসব কর্মসূচি চলমান আছে, সেগুলো খাদ্য নিরাপত্তায় কতটা সহায়ক, তা বিবেচনায় নিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০