খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় জোর দিন

প্রধান খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ার ফলে জীবিকানির্ভর কৃষি থেকে বাংলাদেশের কৃষি আজ বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

কৃষি খাতে বায়োটেকনোলজির ব্যবহার, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, সুষম সার ব্যবস্থাপনা, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, বায়োফর্টিফিকেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান সমৃদ্ধ শস্য উৎপাদনে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ফসল উপযোগিতা নিরূপণ ও ক্রপ জোনিংয়ের জন্য জিআইএস (জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেম) প্রযুক্তিনির্ভর অনলাইন ক্রপ জোনিং ইনফরমেশন সিস্টেম সফটওয়্যার প্রস্তুত করা হয়েছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষিপণ্যের রপ্তানি বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় জোয়ার-ভাটা এবং জলোচ্ছ্বাস ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সমুদ্রের নোনা পানি কৃষিজমিতে প্রবেশ করায় আবাদি জমি ক্রমাগত লবণাক্ত হয়ে পড়ছে এবং জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে। হাওর তথা বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা, বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বাড়ার কারণে ধানের উৎপাাদন সন্তোষজনক না হলে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অব্যাহত অগ্রগতি ও সফলতার ফলে দেশের খাদ্য পরিস্থিতি বর্তমানে সন্তোষজনক হলেও ভবিষ্যতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও কৃষিজমি কমে যাওয়ার চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। দেশে খাদ্য উৎপাাদন ঘাটতি পূরণ হলেও পুষ্টিহীনতায় অনেক মানুষ নানা ধরনের রোগের শিকার হয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষিনীতি, জাতীয় বীজনীতি, জাতীয় খাদ্যনীতি ও এসডিজির সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের জনগণের পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য নিরাপত্তা বিধান করতে জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি এড়ানোর জন্য নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন, পশ্চাৎপদ নৃগোষ্ঠীর জন্য পাহাড়ি অঞ্চলে ফলের বাগান সৃজন ও সবজি আবাদের বিস্তার এবং অনুন্নত চর ও হাওরাঞ্চলে সমন্বিত কৃষি সহায়ক প্রকল্পসহ বহুবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য উৎপাদনকালীন, বাজারজাতকালীন, প্রক্রিয়াজাতকালীন, রন্ধনকালীন ও পরিবেশনকালীন সময়ে খাদ্য নিরাপদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন রাখতে করণীয় বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

জনবহুল এ দেশে সীমিত চাষের জমি, জলবায়ুর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে টেকসই কৃষি উন্নয়নে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সাফল্য অর্জনের ধারা অব্যাহত রাখতে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও অধিক বিনিয়োগ ও অংশীদারি প্রয়োজন। দেশের আবাদযোগ্য প্রতি ইঞ্চি জমিতে উন্নত প্রযুক্তি অনুসরণ করে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন ফসলের আবাদ নিশ্চিত করতে হবে। ফলে উৎপাদন দ্বিগুণ ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। উন্নত সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থাপনার কৌশল প্রণয়ন, ই-কমার্স ও ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে খাদ্য উৎপাাদন বৃদ্ধি করে বাংলাদেশ হবে দারিদ্র্যমুক্ত দেশ।

শিক্ষার পাশাপাশি? ব্যবহারিক প্রয়োগে জোর দিতে হবে। কৃষিকাজে আগ্রহ তৈরির জন্য শিক্ষত মানবসম্পদের ব্যবহার আত্মনিয়োগ বাড়াতে হবে। কৃষিকাজের জন্য প্রকৃত পেশাদারদের সরকারি সব ধরনের সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে হবে। শিক্ষিত বেকার জনশক্তিকে কৃষিকাজে উদ্বুদ্ধ ও বিনিয়োগ করতে হবে। দুনিয়াব্যাপী খাদ্য সংকট মোকাবিল ও উত্তরণে কৃষি উৎপাদনের বিকল্প নেই। জতীয় অর্থনীতি সফলতা উন্নয়ন ও অগ্রগতি, বর্তমান সময়ের ডলার সংকট মোকাবিলায় জাতীয়ভাবে কৃষি কৃষকের অগ্রগতিসহ আরও সফলতা চাই।   

মাহমুদুল হক আনসারী

চট্টগ্রাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০