মনমেজাজ ভালো ও সতেজ রাখতে পারলে আর কী চাই? দিন ও রাত ফুরফুরে হয়ে যায়। এ ভাবাবেগে যদি সহায়তা করে খাবার, তাহলে তো কথাই নেই। আসলেই এমন অনেক দৈনন্দিন খাবার রয়েছে, যা মন ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক কিংবা শারীরিক চাপ থাকলে দেহের কোষের ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। সেই প্রভাব আঁকড়ে রাখে মনকে। ফলে খারাপ হয়ে যায় মন। তাই এমন কিছু খাবার খেতে পারেন যেগুলোতে পুষ্টিগুণ রয়েছে। এতে মন বেশ ভালো থাকবে ও মানসিক চাপও দূর হবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় এমন খাবার রেখে সব সমস্যা দূর করুন।
শাকসবজি: গবেষকরা দেখেছেন, সবজিসমৃদ্ধ সুষম খাবার খুব সহজে মানুষের মন ভালো করে তোলে। কেননা শাকজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ বা মিনারেলসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকে। বিশেষ করে সবুজ শাকে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা বেশি। যেমন পালংশাকে রয়েছে ফলিক অ্যাসিড ও ম্যাগনেশিয়াম, যা বিষন্নতা কমাতে বেশ সাহায্য করে। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপেন ও আলফা লিপোক অ্যাসিড এসব উপাদান হতাশা দূর করে। মিষ্টিআলুতে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন, যা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। পেঁয়াজ-রসুনে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি, মেজাজ পরিবর্তনে সহায়ক এটি।
ফলমূল: ফলে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল, যা আমাদের দেহকে সুস্থ রাখে ও মস্তিষ্কের উর্বরতা বৃদ্ধি করে। ফলমূল মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। যেমন বিটরুটে রয়েছে ফলেট ও ম্যাগনেসিয়াম, যা মস্তিষ্কে ভালো লাগার হরমোন সেরেটেনিন উৎপাদনে সাহায্য করে। কমলা ও মাল্টার মতো টকজাতীয় ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণে ‘সি’ ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা দ্রুত মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যামিনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন। এসব উপাদান মনকে শিথিল করতে সাহায্য করে, ঘুম ভালো হয়। নারকেলে যে ফ্যাট থাকে তা মন-মেজাজ ও মস্তিষ্ক সতেজ রাখতে
সাহায্য করে। তবে নারকেলের দুধ ও নারকেল দিয়ে তৈরি মিষ্টি শরীরের পক্ষে খুব একটা ভালো নয়। তাই কাঁচা নারকেল খাওয়া ভালো। কালোজাম বা ব্লুবেরির বেগুনি রংটা আসে অ্যান্থোসিয়ানিন নামক একটি উপাদান থেকে, যার রয়েছে মেজাজ ভালো করে দেওয়ার ক্ষমতা। অ্যাভোকাডোয় গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট লাইকোপেন ও বিটা ক্যারোটিন থাকে। উপাদানগুলো মন ভালো রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন খাবারের তালিকায় ফল থাকলে মস্তিষ্ক উর্বর হয়।
মাছ: আনন্দে থাকার জন্য খুবই উপযুক্ত একটি খাবার মাছ। এতে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড মন ভালো রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের তেলের মতো কয়েকটি খাবার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাছাড়া প্রতিদিন মাছ খেলে ৫০ শতাংশ উপসর্গ, যেমন ইনসমোনিয়া, বিষন্নতা ও আত্মঘাতী চিন্তা কমে যায়। তাই মন ও দেহ ভালো রাখতে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাছ রাখুন।
চকোলেট : চকোলেটের মধ্যে অ্যানানডামাইড নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। এটি বিষন্নতা দূর করে মন ভালো রাখে। তবে ভালো মান কিংবা গাঢ় চকোলেটে এ উপাদান পাওয়া যায়। তাই মন খারাপ হলে খেতে পারেন চকোলেট।
বাদাম: বিভিন্ন ধরনের বাদামে রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড। এগুলো উদ্বেগ ও মন খারাপের বিরুদ্ধে কাজ করে।
সবুজ চা: গ্রিন টি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, অ্যামিনো অ্যাসিড ও থিয়ানিনে সমৃদ্ধ। এসব উপাদান মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমানোর জন্য বেশ পরিচিত। তাই মন খারাপ হলে কিংবা হতাশা কাটাতে গ্রিন টি পান করা উপকারী।
পনির: এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক, যা হতাশা ও বিষন্নতা দূর করে থাকে। তবে অতিরিক্ত পনির খাওয়া দেহের জন্য ক্ষতিকর। পরিমাণমতো খেলে উপকার পাওয়া যাবে।
টক দই: টক দই খাওয়ার পর তা মস্তিষ্কে ডোপামিন ও নোরিপাইনেফ্রিন নামক দুটি রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ করে, যা মানসিক অবস্থা ভালো করতে সাহায্য করে। তাছাড়া টক দইয়ে রয়েছে অ্যামিনো অ্যাসিড ট্রিপ্টোফ্যান, যা সেরোটোনিন উৎপাদনে সাহায্য করে মন ও শরীরকে শান্ত রাখে।
মধু: মধু খেলে মন বেশ চাঙা থাকে। এতে থাকা কেমফেরল ও কুয়েরসেটিন মস্তিষ্কের উত্তেজনা হ্রাস করে বিষন্নতা কমাতে সাহায্য করে।
লেবু: লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন ‘সি’ ত্বকের জন্য ভালো। এছাড়া লেবু খেলে হজম হয় দ্রুত। আর হজম ঠিকঠাক থাকলে মন ভালো থাকে।
ওটস: ওটস আরও একটি কার্যকর খাবার, যা মেজাজ ফুরফুরে রাখে। এটি রক্তে শক্তি সরবরাহ করে ও রক্তে সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে আমাদের মানসিক স্থিরতা বজায় রাখে। এছাড়া ওটস মন চাঙাকারী উপাদান সেলেনিয়াম বহন করে।
বীজজাতীয় খাবার: অ্যামিনো এসিডের একটি ভালো উৎস সূর্যমুখী বীজ। এটি মস্তিষ্কে সুখবোধ সৃষ্টি করে, এমন রাসায়নিক পদার্থ তৈরিতে কাজ করে ও বিষন্নতা দূর করে।
পানি: অনেক সময় ডিহাইড্রেশনের জন্য মানসিক চাপ বেড়ে যায় ও মন খারাপ বেশি হয়। তাই মন খারাপ দূর করতে পানি পান করুন। পানি পানের ফলে অনেকটা হালকা হয়ে যাবে মন।
সাবধানতা: ক্যাফেইন, অতিরিক্ত চিনিজাতীয় খাবার এবং প্রক্রিয়াজাত বা ফাস্টফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলো আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। আর শরীর ভালো না থাকলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে মনের স্বাস্থ্যের ওপর। সুতরাং স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।