খালেদাকে সরিয়ে দিলে আপনার ক্ষমতায় থাকতে সুবিধা হবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: এক-এগারোর সময় শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের পর খালেদা জিয়া তার মুক্তির জন্য বিবৃতি দিয়েছিলেন উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গণতন্ত্রে বিশ্বাস করা একজন নেত্রীকে আপনি (শেখ হাসিনা) মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। কেন দিচ্ছেন আমরা সবাই বুঝি, সবাই জানে। কারণ তাকে সরিয়ে দিতে পারলে, আপনার সামনে থেকে একটা বড় কাঁটা সরে গেল। আপনার ক্ষমতায় থাকতে সুবিধা হবে।’

গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ডা. মিলন দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ৯০’র ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘৯০-এর প্রেক্ষিত আর আজকের প্রেক্ষিত এক নয়। স্বৈরাচার আর ফ্যাসিবাদের মধ্যে বিশাল পার্থক্য। আজকে লড়তে হচ্ছে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখন সরাসরি গুলি করে রাষ্ট্র। কোনো ছাত্রলীগের গুণ্ডা কিংবা বিভ্রান্ত কোনো ছাত্র নেতারা করে না। গুলি করছে রাষ্ট্র, গুলি করছে পুলিশ। দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে বিরাজনীতিকরণের মাধ্যমে একদলীয় ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েমের জন্য এক এগারোর সময় থেকে পরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে। এক এগারো থেকেই এই চক্রান্ত শুরু হয়েছে। তারই ফল স্বরূপ আজকে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।’

তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থা নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলছেন। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীরা সেটাকে নিয়ে বিদ্রƒপ করতেও দ্বিধা করেন না। এত অমানুষ এরা। প্রকৃতপক্ষে খালেদা জিয়াকে কেন বিদেশে চিকিৎসার কথা বলা হচ্ছে, তা আমাদের সবার জানা উচিত। দেশনেত্রীর অসুখ প্রধানত তার পরিপাকতন্ত্রে। ঠিক কোন জায়গায় তার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তা বের করার জন্য আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তাররা গত কয়েকদিন ধরে নানারকম চিকিৎসা পদ্ধতিতে কাজ করছেন। কিন্তু একটা জায়গায় এসে তারা আর আগাতে পারছেন না। কারণ বাংলাদেশে তাদের কাছে আর কোনো টেকনোলজি নেই। যে টেকনোলজি দিয়ে সেই জায়গায় পৌঁছাতে পারেন। যে কারণে তারা বারবার বলছেন, খালেদা জিয়াকে একটা অ্যাডভান্স সেন্টারে নেয়া দরকার। যেখানে এই প্রযুক্তি, ডিভাইসগুলো আছে, সেখানে গেলে রোগের সঠিক জায়গাটা তারা ধরতে পারবেন।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এখন যেটা খালেদা জিয়ার জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে, তা হলো পরিপাকতন্ত্রে রক্তক্ষরণ। এটা বন্ধ করা জরুরি। দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেশে সরকারি দলে যারা আছেন, তাদের ন্যূনতম রাজনৈতিক শিষ্টাচার তো নেই-ই। মানবিক বোধও নেই। নিজের সম্পর্কে এত দাম্ভিকতা করেন যে, দেশনেত্রী সম্পর্কে কটু কথা বলতেও তারা এতটুকু দ্বিধা করেন না।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক, সে জন্য তার মুক্তি, তার চিকিৎসা, তার বেঁচে থাকা এ দেশের জনগণের কাছে, জাতির কাছে খুব বেশি প্রয়োজন। খালেদা জিয়া শুধু বিএনপির নেত্রী নন, তিনি এ দেশের জনগণের নেত্রী। তিনি স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কেন আজকে সব মানুষ তার জন্য দোয়া করছে। কালকে যখন বায়তুল মোকাররমে তার জন্য দোয়া হচ্ছিল তখন রিকশাচালক, হকার সবাই হাত তুলে দোয়া করেছিল আর কাঁদছিল। যে ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮১ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শহীদ হওয়ার পর। দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব এবং জিয়াউর রহমানকে মানুষ এক করে দেখেছিল। মানুষ মনে করেছিল জিয়াউর রহমান চলে গেল, দেশও বোধহয় চলে গেল। আজকে একইভাবে এদেশের মানুষের মধ্যে সেই উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা এসেছে খালেদা জিয়া যদি চলে যান তাহলে দেশের স্বাধীনতা থাকবে, কি থাকবে না। গণতন্ত্র থাকবে কি থাকবে না? সে জন্য আজকে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেনÑহাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন, নাজিম উদ্দিন আলম, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, কামরুজ্জামান রতন, খন্দকার লুৎফর রহমান, আসাদুর রহমান খান, শহীদুল ইসলাম বাবুল, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, আমিরুল ইসলাম আলীম ও আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০