নিজস্ব প্রতিবেদক: খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে তার অসুস্থতা পুঁজি করে বিএনপি রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য জলঘোলা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সুনির্দিষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত বিষয়ে লজ্জাহীনভাবে মিথ্যা ও বিকৃত তথ্য জাতির সামনে উপস্থাপন করেছেন। তিনি এবং তার দল বিএনপি চিরাচরিত অপরাজনীতির ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়েও ক্রমাগতভাবে সীমাহীন মিথ্যাচারের মাধ্যমে জাতিকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশবাসী জানে, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা সর্বোচ্চ মানবিকতা ও উদারতা নিয়ে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে নিজ ঘরে থেকে দেশের সর্বাধুনিক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীর জন্য এমন মানবিকতার উদাহরণ বিরল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যার সেই উদারতা বিএনপি মহাসচিব শুধু অসম্মানই করেননি, গোটা বিষয় নিয়ে উসকানিমূলক মন্তব্যের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আইন, বিচার প্রক্রিয়া ও সংবিধান সম্পর্কে দায়িত্বহীন বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা পুঁজি করে
রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য জল ঘোলা করার অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, মির্জা ফখরুল রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও প্রতিপক্ষকে (খালেদা জিয়াকে) মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ করেছেন! কিন্তু ইতিহাস জানে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা অবৈধ ক্ষমতাদখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এমনকি খুনিদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের আইনি সুরক্ষা দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিলেন।
তিনি বলেন, জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনি রশিদ ও হুদাকে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনে পার্লামেন্টে বসিয়েছিল। খুনি খায়রুজ্জামানকে চাকরিতে পুনর্বহাল করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি দিয়ে পদোন্নতির মাধ্যমে রাষ্ট্রদূত পদে নিয়োগ দিয়েছিল। ১৫ আগস্ট জাতির পিতার শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসের দিন খালেদা জিয়া ভুয়া জš§দিন পালনের মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত প্রতিহিংসাপরায়ণ ষড়যন্ত্রের রাজনীতির ধারা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং প্রতিপক্ষকে হত্যা করার মতো নিকৃষ্ট মানসিকতা ঐতিহ্যগতভাবেই বিএনপির মতাদর্শ।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কখনও প্রতিহিংসার রাজনীতি করেন না। বরং তিনি বারবার বিএনপির প্রতিহিংসা ও আক্রোশের রাজনীতির শিকার হয়েছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত অশুভ জোট সরকারের সময় হাওয়া ভবনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বঙ্গবন্ধুকন্যাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পর শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে গেলে বাসার প্রবেশদ্বারে তালা দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। তারপরও বঙ্গবন্ধুকন্যা সর্বোচ্চ নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে একজন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হওয়া সত্ত্বেও খালেদা জিয়াকে নিজ বাসায় থাকা ও উন্নত চিকিৎসার সুযোগ করে দিয়েছেন। এমন মানবিকতার দৃষ্টান্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে হলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাকে আদালতের শরণাপন্ন হতেই হবে। বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ারে। এ নিয়ে রাজনীতি করার কোনো সুযোগ নেই।