নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়ে যে আবেদন তার পরিবার করেছিল, এবারও তাতে সম্মতি দেয়নি আইন মন্ত্রণালয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গত রোববার বলেছেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে তাকে সাময়িক মুক্তি দিয়েছিল। সেটা চলমান থাকা অবস্থায় তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই।
‘তাকে এখন ৪০১ ধারায় যে মুক্তি দেয়া হয়েছে সাজা স্থগিত রেখে, সেটা বাতিল হলে আবার বিবেচনা করার সুযোগ থাকবে।’
এর আগেও একই যুক্তিতে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন একাধিকবার নাকচ করেছিল সরকার। আইনমন্ত্রী সে সময় বলেছিলেন, খালেদা জিয়া যদি কারাগারে ফিরে গিয়ে নতুন করে আবেদন করেন, তাহলে সরকার বিবেচনা করতে পারে।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয়া হয়।
৭৮ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হƒদরোগ, কিডনি, লিভার জটিলতায় ভুগছেন। গত ৯ আগস্ট থেকে তিনি বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের বরাতে বিএনপি নেতারা বলে আসছেন, তাদের নেত্রীর অবস্থা ‘সংকটজনক’। লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য তাকে দ্রুত বিদেশে পাঠানো ‘জরুরি’।
সর্বশেষ গত ১২ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ আরও ৬ মাস বৃদ্ধি করে সরকার। তখনও তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চেয়েছিল তার পরিবার। কিন্তু সরকার সে আবেদনে সাড়া দেয়নি।
তার দুই সপ্তাহের মাথায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইসকান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন করে আবেদন করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনকে স্থায়ীভাবে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি চাওয়া হয় সেখানে। এরপর নিয়ম অনুযায়ী গত বুধবার আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় মতামতের জন্য।
রোববার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়ে ফাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফেরত পাঠিয়েছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘ফৌজদারি আইনের ৪০১ ধারার কোনো দরখাস্ত যদি একবার নিষ্পত্তি করা হয়, সেই নিষ্পত্তি করা দরখাস্ত পুনর্বিবেচনা করার কোনো অবকাশ আর আইনে থাকে না।’
‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার উপধারা ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ব্যাখ্যা করে আমরা আমাদের মতামত পাঠিয়ে দিয়েছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানে আমরা মতামত দিয়েছি, ৪০১ ধারার ক্ষমতাবলে যে দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে, সেটা পাস্ট অ্যান্ড ক্লোজড ট্রানজেকশন, এটা খোলার আর কোনো উপায় নেই।’
আইনমন্ত্রী বলেন, আগের আদেশে শুধু মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ ছিল, সরকার সে অনুযায়ী আটবার খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত ও সাময়িক মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছেন, বিদেশে যেতে চাইলে খালেদা জিয়াকে আদালতে যেতে হবে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
জবাবে আনিসুল হক বলেন, আদালতে যাওয়ার সুযোগ সব সময়ই আছে। তবে সরকার যখন ৪০১ ধারায় ক্ষমতা প্রয়োগ করে, সেটা আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যায় না।
‘প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন, এখন যেটা আদেশ আছে, সেটা যদি বাতিল করা হয়, আবার যদি আবেদন করা হয়, সেই অবস্থায় তিনি আদালতে যেতে পারেন।’ তবে সরকার ওই আদেশ নিজে থেকে বাতিল করবে নাÑজানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বাতিল করাটা অমানবিক হবে, বাতিল করব না।’