খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ফের ‘চক্রান্ত’ করছে: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বিভিন্ন বক্তব্যে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রাজধানীর গুলশানে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ, বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ। আপনারা জানেন, একবার তাকে চার মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছে এবং তখনও আপনাদের বারবার করে বলেছি যে, তিনি খুব জটিল কিছু রোগে ভুগছেন। তার মধ্যে লিভার-সংক্রান্ত জটিলতা আছে, হƒদরোগ-সংক্রান্ত জটিলতা আছে, ডায়বেটিসের জটিলতা আছেÑএই বিষয়গুলো সবাই জানেন। এর পরও যদি তারা এসব কথাবার্তা বলে, অপপ্রচার করেÑএই কথা বলার অর্থই হচ্ছে তারা আবারও কোনো গভীর চক্রান্ত করছে।’

তিনি বলেন, ‘যে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে তারা আবার কারাগারে নিতে পারে কি না, সেই পরিকল্পনা-চক্রান্ত করছে কি না, সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এদিন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন দলের মহাসচিব।

খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে সরকারের মন্ত্রী-নেতাদের নানারকম বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার করে বলেছি, তার (খালেদা জিয়া) চিকিৎসা পাওয়া একটা মৌলিক অধিকার। এজন্য ডাক্তাররা বলেছেন, তার মেডিকেল বোর্ড বলেছে, তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে বিদেশে পাঠানো দরকার। বাংলাদেশে তার সেই উন্নত চিকিৎসা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার সে বিষয়ে কোনো কর্ণপাত করেনি। উপরন্তু ওই ধরনের কথাবার্তা বলে অমানবিক আচরণ করছেন তারা। আমাদের দেশনেত্রীর সঙ্গে এবং জনগণের সঙ্গে তামাশা করছেন।’

৭৭ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভারসহ নানা রোগে ভুগছেন। অসুস্থতার মধ্যে গুলশানে তার বাসা ‘ফিরোজা’য় চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা চলছিল। গত ২০ এপ্রিল তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে শনিবার এভারকেয়ারে ভর্তি হন বিএনপি চেয়ারপারসন।

অত্যাবশ্যক পরিষেবার ক্ষেত্রে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা সরকারের হাতে দিয়ে গত ৬ এপ্রিল সংসদে একটি আইন করার প্রস্তাব ওঠে। আইনটি পাস হলে কোনো ব্যক্তি ‘বেআইনি’ ধর্মঘট করলে বা চলমান রাখলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের দণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। পাশাপাশি সরকার প্রয়োজন মনে করলে জনস্বার্থে কোনো প্রতিষ্ঠানে লকআউট ও লেঅফ নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ বিষয়টি নিয়ে গতকাল স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এটি নানা কারণে বিতর্কিত, অগণতান্ত্রিক, শ্রমিক ও পেশাজীবীদের স্বার্থবিরোধী, একতরফা, নিবর্তনমূলক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট বরখেলাপ। এ আইনটি প্রণয়নে কোনো পর্যায়ই অংশীজনের মতামত নেয়া হয়নি।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপি মনে করে, প্রস্তাবিত বিলটি শুধু শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ ও অধিকারকেই ক্ষুণœ করবে না, এটি সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং জনগণের সংবিধানসম্মত প্রতিবাদের অধিকার পরিপন্থি। বিএনপি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবা বিল-২০২৩ প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছে।’

ফখরুল বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইনের পরিধি শুধু বিস্তৃত নয়, অসীম। সরকার ইচ্ছা করলেই যে কোনো শিল্প, প্রতিষ্ঠান, পেশা ও সেবাকে এ আইনের আওতায় এনে ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে তা অমান্য করাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বানাতে পারবে। এই প্রস্তাবিত আইনকে প্রচলিত শ্রম আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়ে যুগ যুগ ধরে আন্দোলন করে শ্রমজীবী জনগণ যা কিছু অধিকার অর্জন করেছিল, তা এই আইন দিয়ে নাকচ করে দেয়া হবে। বাংলাদেশ ১৯৭২ সালে আইএলও কনভেনশন ৮৭ ও ৯৮ নম্বর অনুসমর্থন করেছে, যেখানে ধর্মঘটের অধিকারকে সংগঠিত হওয়ার অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু প্রস্তাবিত বিলে দেশের বিপুলসংখ্যক শিল্প, প্রতিষ্ঠান ও সেবা খাতকে ‘অত্যাবশ্যক পরিষেবা’ হিসেবে চিহ্নিত করে শ্রমজীবী মানুষের ধর্মঘটের অধিকার কেড়ে নেয়ার অর্থ হলো তাদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার কেড়ে নেয়া।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শুধু শ্রমজীবী নয়, পেশাজীবীরাও প্রস্তাবিত আইনটির প্রতিবাদ করছে। আমাদের ডাক্তার ও নার্সরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, তারা এ নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তারা বলেছেন, এটা যদি বাতিল না করা হয়, তারাও আন্দোলনে নামবেন। আমাদের দেশের শ্রমিকদের ফেডারেশন স্কপ প্রতিবাদ করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন, বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে, ‘ইন্ডাস্ট্রি অল’ যে আন্তর্জাতিক সংগঠন তার বাংলাদেশ চ্যাপ্টার এর প্রতিবাদ করেছে। সবাই এর প্রতিবাদ করছে। এটা অনেক বড় একটা ঘটনা যে, বিএনপির মতো দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল আজকে শ্রমজীবী মানুষ, পেশাজীবী মানুষ যারা অ্যাফেক্টেড হবেÑআল্টিমেটলি দেশের সাধারণ মানুষ অ্যাফেক্টেড হবে, তাদের মৌলিক অধিকার, মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০