খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএমএ’র বক্তব্য দুঃখজনক: ড্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশেই সম্ভব বলে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) যে বক্তব্য দিয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ।

গতকাল দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে ড্যাব আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

ড্যাব সভাপতি ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিদেশ থেকে চিকিৎসক আনার যে বিষয়টি বিএমএ বলেছে, সেটি

শুধু কালক্ষেপণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মধ্য দিয়ে তারা সরকারকে সমর্থন করছে।

তিনি বলেন, ‘আজকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং বিপক্ষে নামক একটি বিভাজন তৈরি করা হয়েছে। খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, সংসদীয় ব্যবস্থার প্রবর্তক এমন একজন মানুষ, সেই মানুষটি বর্তমানে অসুস্থ। খালেদা জিয়াকে দেশের স্বনামধন্য চিকিৎসকরা যুক্ত আছেন। তারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এ দেশে সম্ভব নয় এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতেও সম্ভব নয়। এর বিপক্ষে সরকারি অবস্থান, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের অবস্থানও একই, যা খুবই দুঃখজনক। আমরা চিকিৎসক সমাজ হিসেবে একটা হিপোক্রেটিক শপথ নেই যে সেবার ক্ষেত্রে কখনও আমরা মিথ্যা বলব না, অন্যায় করব না, রোগীর স্বার্থে সবসময় কাজ করব। বিএমএ নেতারা সেই শপথ ভঙ্গ করেছেন। অসুস্থ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।’

ড্যাব সভাপতি আরও বলেন, লিভার সিরোসিস, বাংলাদেশে লিভার ট্রান্সপ্লান্টও হয় না। দুজনকে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল, তার মধ্যে একজন ইন্তেকাল করেছেন; আরেকজনের অবস্থা খুবই খারাপ। আর এটা শুধু বাংলাদেশের চিকিৎসকরা করেননি। বিদেশ থেকে টিম এসে এ কাজ করা হয়েছিল। আর লিভার সিরোসিসের চিকিৎসা বাংলাদেশে হয়, এটা ভুল তথ্য।

সঠিক সময়ে চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাব থেকে তথ্য না দিলে মানুষের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝি ও গুজবের সৃষ্টি হয়। আপনারা গুজবের সুযোগ করে দিচ্ছেন কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সঠিক খবর কিন্তু খালেদা জিয়ার চিকিৎসকরা দিয়েছেন, যা বিশ্বাসযোগ্য। ড্যাব যদি সব তথ্য দিতে থাকে তাহলে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাই আমি মনে করি, তারা সঠিক সময়ে মানুষের কাছে তথ্য প্রকাশ করেছেন। এখন সরকার এ ব্যাপারে চাপও অনুভব করছে।

তিনি বলেন, দেশের বাইরে থেকে চিকিৎসক আনার কথা বলা হয়েছে এবং চিকিৎসা ভারতে করা যায় এমনটা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনারা কী ভাবছেনÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার জন্য তো বাইরে থেকে চিকিৎসক আনা হয়েছিল। তাহলে তাকে কেন বাইরে নেয়া হলো? কারণ চিকিৎসার জন্য যা প্রয়োজন তার সব বাংলাদেশে নেই। বাংলাদেশে হার্টের অপারেশন হয়, এনজিওপ্লাস্টি হয়, এনজিওগ্রাম হয়। বাংলাদেশে হার্টের কাজ হয় না এমন কোনো কিছু নেই। তারপরও তাকে বিদেশে নেয়া হলো। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন খালেদা জিয়ার যে চিকিৎসা সেটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে আছে। এটা সম্পূর্ণ একটা টিমওয়ার্ক। আমরা চিকিৎসক আনলাম পরে দেখা গেল তিনি বলছেন যে আমি একা পারব না। তাই আমরা মনে করছি, যারা বলছেন তার চিকিৎসা দেশে হতে পারে, সেটা আসলেই ভুল।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমানভাবে এগিয়ে গেলেও এখনও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা বিদ্যমান। যার ফলে এদেশের চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া আশানুরূপ আরোগ্য লাভের পরিবর্তে ধীরে ধীরে অন্তিম পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, এ অবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমাদের আকুল আহ্বান, জরুরি ভিত্তিতে তার মুক্তির ব্যবস্থা করে বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা হোক। আমরা আশা করি, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেনÑড্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহীদ হাসান, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মো. মেহেদী হাসান, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. নিলোফা ইয়াসমিন ও ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০