খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে সরকার কোনো চাপে নত হবে না: ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি’র বিষয়ে সরকার বাইরের কোনো চাপের কাছে ‘নতি স্বীকার করবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সরকারের সে তুমন্ত্রী ওবায়ুদল কাদের।

তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। অন্য দেশেরও বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ যুক্তিযুক্ত মনে করি না। বেগম খালেদা জিয়ার বিষয়টি আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সরকার কোনো চাপের কাছে নতি স্বীকার করেনি, করবেও না।’

গতকাল বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে রোড সেফটি প্রজেক্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন কাদের। সে সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মুক্তি নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চান সাংবাদিকরা। কাদের বলেন, বেগম জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে যতটা না তারা উদ্বেগ

তৈরি করেছে, তাকে নিয়ে রাজনীতির চর্চা করেছে আরও বেশি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৮ সালে কারাগারে পাঠান আদালত। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর পরিবারের আবেদনে ২০২০ সালে সরকার নির্বাহী আদেশে দণ্ড স্থগিত করে খালেদাকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়। ওই বছরের ২৫ মার্চ থেকে তিনি গুলশানের ভাড়া বাড়িতে রয়েছেন।

অসুস্থতার কারণে এরই মধ্যে কয়েকবার হাসপাতালে যেতে হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে পাঠানোর অনুমতি দিতে পরিবারের তরফ থেকে কয়েক দফা আবেদন করা হলেও সরকারের সায় মেলেনি।

সর্বশেষ গত সোমবার রাতে আবার ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। সেখানে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা চলছে।

এদিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলকে একটি চিঠি লিখেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিএনপিসহ অন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের আলোচনার কথাও বলা হয় সেখানে।

সেই প্রসঙ্গ ধরে গতকাল ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন একজন সাংবাদিক। তিনি জানতে চান, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কি না?

এ বিষয়ে কোনো চাপে সরকার ‘নত হবে না’ মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘যখন বেগম খালেদা জিয়ার বিচার চলছিল, তখন অহেতুক অনুপস্থিত থেকে বিচারকে বিলম্বিত করতে চেয়েছে। এমন কোনো আইনি লড়াই করতে পারেনি, আন্দোলন করতে পারেনি, যেটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে।’

আওয়ামী লীগ সরকার খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়েছে বলে যে অভিযোগ বিএনপি করে থাকে, সেগুলো ‘মিথ্যা’ বলে মন্তব্য করেন কাদের।

বিএনপিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনি কতটা জনপ্রিয় প্রমাণ করতে হলে নির্বাচনে আসতে হবে।’

‘বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাদের পদত্যাগ করা দরকার’ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল নিজে ব্যর্থ। সবার আগে বিএনপি নেতৃত্বের টপ টু বটম পদত্যাগ করা দরকার। দৃশ্যমান কোনো আন্দোলন তারা করতে পারেনি। বিএনপির ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা নেই, দেশের গণতন্ত্র আনবে কীভাবে?’

একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে সরকারের সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে ৬ জানুয়ারি গণতন্ত্রের নামে কী হলো? ছয়টি প্রাণ গেল। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও নির্বাচনে পরাজয় মেনে নেননি।’

বাস্তবে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ খুঁজে পাওয়া ‘দুষ্কর’ বলে মন্তব্য করে কাদের বলেন, ‘কিছু না কিছু ত্রুটি আছে। আমাদের গণতন্ত্রও সম্পূর্ণ ত্রুটিমুক্ত বলছি না, ত্রুটিমুক্ত করার চেষ্টা করছি। নির্বাচন কমিশনকে আইন করে স্বাধীন করা হয়েছে।’”

জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করার দাবি আছে। বিষয়টি উচ্চ আদালতে আছে। চূড়ান্ত রায় আসেনি। সরকার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারে না। দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।

এর আগে অনুষ্ঠানে কাদেরের বক্তব্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের প্রসঙ্গ উঠে আসে। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক ইচ্ছা করলে পদ্মা সেতুর কাজটি হাতে নিতে পারত। এখানে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। একটা ষড়যন্ত্র ছিল। এর সঙ্গে বাঘা বাঘা কিছু ব্যক্তি জড়িত ছিল।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ‘আক্ষেপ’ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এত উন্নয়নের পরও সড়ক দুর্ঘটনা কেন এড়াতে পারছি নাÑএটা আজকে প্রশ্ন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশের সড়কের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন। পরে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি অপরাধ ও অপারেশন আতিকুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের রোড সেফটি প্রজেক্টের সিনিয়র ট্রান্সপোর্ট স্পেশালিস্ট দীপন বোস।

সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান, বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ট্রান্সপোর্ট প্র্যাকটিস ম্যানেজার ফেই ডেং, বাংলাদেশ ও ভারতের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুলায়ে সেক, বিশ্বব্যাংকের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভাইস প্রেসিডেন্ট গুয়ানজে চেন বক্তব্য দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০