নিজস্ব প্রতিবেদক: খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি ও সুচিকিৎসার’ দাবিতে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যেই সমাবেশে মিলিত হন বিএনপি নেতাকর্মীরা। গতকাল বিকাল পৌনে ৩টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এই সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কাউন্সিলসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সমাবেশে মিলিত হন। দীর্ঘ আড়াই বছর পর রাজধানীতে এই সমাবেশ করেছে বিএনপি। ঢাকা মহানগর পুলিশ ২৩টি শর্তে তাদের এই সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে।
গত ১৫ জুলাই সংবাদ সম্মেলনে সমাবেশের এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেই ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল বেলা ৩টায় নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা হয়।
উল্লেখ্য, এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায়ের পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে দাবি করে তাকে মুক্তি দিয়ে ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
এই দাবিতে ঢাকা ছাড়াও সারা দেশে মহানগর-জেলা-উপজেলায় একযোগে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে বলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছেন। শুক্রবারের সমাবেশ ঘিরে সকাল থেকেই নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের আনাগোনা শুরু হয়। তবে পুলিশের শর্তের কারণে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে শুরু করেন দুপুরে জুমার নামাজের পর।
বেলা আড়াইটায় প্রখর রোদের মধ্যেই নেতাকর্মীরা ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই ধারে অবস্থান নেন। তাদের হাতে দেখা যায় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবিসংবলিত ফেস্টুন ও ব্যানার।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ ভেঙে দেওয়া ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে নির্বাচন দিতে হবে। অন্যথায় এদেশের মানুষ কোনো নির্বাচন হতে দেবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশের অবস্থা অত্যন্ত ভয়াবহ। অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে গেছে। টাকা এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংকের সোনা পর্যন্ত লুট করা হয়েছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। জনগণের দাবি আদায় করতে হবে। অপশাসনকে পরাজিত করতে হবে, জাতিকে মুক্তি দিতে হবে।
খালেদা জিয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, যে মানুষটি দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছেন, তাকে আজ অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তিনি এতটাই অসুস্থ যে তার আত্মীয়রা দেখা করতে গেলে তিনি নিচে আসতে পারেন না। অথচ সরকারের মন্ত্রীরা বলছেন, আমরা খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে রাজনীতি করছি। রাজনীতি তো করছেন আপনারা, কারণ খালেদা জিয়াকে আপনারা ভয় পান, সেজন্য একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় তাকে কারাগারে আটকে রেখেছেন। যে মামলায় তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, সে মামলায় তাকে অন্যায়ভাবে সাজা দিয়েছেন, কারণ একটাইÑরাজনীতি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগে বিএনপি ও বিরোধী নেতাকর্মীদের গুম করা হতো। এখন নতুন নাটক শুরু হয়েছে, মাদকের নামে নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। সরকার আজ দেশে একটা ভয়াবহ ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। এ দেশে আজ প্রতিটি মানুষ অনিরাপদ। তাদের কখন কোথায় মৃত্যু হবে কেউ জানে না।
কোটা নিয়ে বিএনপির এ নেতা বলেন, যখন আন্দোলন তুঙ্গে তখন প্রধানমন্ত্রী রেগে সংসদে বললেন, কোনো কোটা থাকবে না। আর এখন কী করছেন, যারা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত তাদের গুম-রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে। ছাত্রলীগের ভূমিকা পাকিস্তান আমলের ইয়াহিয়া খানের ছাত্র সংগঠনের মতো। আজ দেশে কেউ নিরাপদ নয়। কেউ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকার খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এমনকি এই দেশের জনগণকে বাইরে রেখে আর একটি প্রহসনের নির্বাচন করতে চায়। সেজন্য একটি মিথ্যা মামলায় কারাবন্দি করে রেখেছে বিএনপি চেয়ারপারসনকে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাড়া এদেশের জনগণ আর কোনো নির্বাচন হতে দেবে না। জনগণ আর বসে থাকবে না।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির সেক্রেটারি কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।

Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 5:54 pm
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি বিএনপির সমাবেশে
পত্রিকা ♦ প্রকাশ: