খাল পুনরুদ্ধারে প্রয়োজন কিছু উদ্যোগ

 

বাংলাদেশের নদনদীর অবস্থা যেমন করুণ, তার চেয়েও করুণ বোধকরি খালগুলোর অবস্থা। নদী নিয়ে প্রচুর আলোচনা ও সভা-সেমিনার হয়; খালের ভাগ্যে এতটা জোটে না। নদীর পরিবর্তন যতটুকু দৃশ্যমান, খালের পরিবর্তন ততটা নয় বলেই হয়তো খাল কম গুরুত্ব পায়। পরিবেশ ও প্রকৃতিতে প্রভাব বিবেচনায় খালের অবদান একেবারে কম নয়। এককালে বরং বিভিন্ন নদীর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতো জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য খাল। বড় বড় খালে নৌকা চলতো। যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে সেগুলো যেমন কাজ করতো, তেমনি মাছের অন্যতম ভাণ্ডার হিসেবেও খালের অবদান অনস্বীকার্য। বর্ষা মৌসুমের পানি সারা বছর ধরে রাখার ক্ষেত্রে খালের ভূমিকার তুলনা হয় না।

সেই দিন আর নেই। নাব্য হারিয়ে দেশের অধিকাংশ খাল এখন মৃতপ্রায়। দূষণেও নষ্ট হয়েছে অনেক খাল। আর দখলদারিত্ব তো রয়েছেই। ঢাকার ধোলাইখালে খালের দেখা মেলে না। ভোলা সদরের বাজারের মধ্যকার খালটি দখলমুক্ত করতে তৎপর হতে হয়েছে স্বয়ং মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদকে। এমন হাজারও খাল রয়েছে, যেগুলোকে এখন আর আলাদা করে খাল হিসেবে চিহ্নিত করা যায় না। এরকমই একটি খালের কথা উঠে এসেছে শেয়ার বিজের গতকালের এক প্রতিবেদনে। ‘পাবনার মৃতপ্রায় সুতিখালি খাল’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পাবনার তিন উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত এ খাল একসময় প্রাকৃতিক মাছের ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত হলেও এর এখনকার অবস্থা করুণ। পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় জন্ম নেওয়া খালটি একদিকে যেমন দখল হয়েছে অনেকটাই, তেমনি নাব্য হারিয়েছে। খালের বুকজুড়ে চাষাবাদ হচ্ছে ধানসহ অন্যান্য শস্য। এভাবে চললে কিছুদিনের মধ্যে খালটি পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

নদীর নাব্য বাড়ানো কঠিন; কিন্তু খালের ক্ষেত্রে ততটা কঠিন নয়। খাল পুনরুদ্ধার করতে সামান্য কিছু উদ্যোগই যথেষ্ট। খাল বিলুপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে তিনটি কারণ মুখ্য এক. অবৈধ দখল, দুই. নাব্য হারানো, তিন. দূষণ। অবৈধ দখল এড়ানোর জন্য রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ তার এলাকার খালটি উদ্ধারে গুরুত্ব দিয়েছেন। একইভাবে প্রত্যেক সংসদ সদস্য নিজ নিজ এলাকার খালগুলো দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিতে পারেন। এভাবে সহজে খাল পুনরুদ্ধার সম্ভব। একবার ড্রেজ করলে দীর্ঘদিন খালগুলো ব্যবহার করা যাবে। প্রয়োজনে খালের দুই পাশ বাঁধাই করা যেতে পারে। এতে পুনর্দখল এড়ানো যাবে, মুক্তি পাওয়া যাবে নাব্য সংকট থেকে এবং খালের যথাযথ ব্যবহারও নিশ্চিত করা যাবে। শিল্পসমৃদ্ধ এলাকাগুলোয় কারখানা থেকে দূষণ যাতে না ছড়াতে পারে, সে ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনই মূল ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা মনে করি, কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেই দেশের অধিকাংশ খাল পুনরুদ্ধার সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০