খুনি মাজেদের ফাঁসি কার্যকর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সকল আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার আসামি আবদুল মাজেদের। হত্যাকাণ্ডের ৪৫ বছর পর ফাঁসিতে ঝুললো আত্মস্বীকৃত এই খুনি। শনিবার রাতে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। গত ৭ এপ্রিল ঢাকায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন আত্মস্বীকৃত খুনি আব্দুল মাজেদ।

রাত ১২টা ১মিনিটে মাজদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। বৈশাখী টেলিভিশনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা।

দীর্ঘ ২৪ বছর বিদেশে পালিয়ে থেকেও বিচারের হাত থেকে শেষ রক্ষা হয়নি বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল মাজেদের। শেষ পর্যন্ত ফাঁসির দঁড়িতে ঝুলতেই হলো এই খুনিকে। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তার ফাঁসি কার্যকর করে কারা কর্তৃপক্ষ। এই কারাগারে এটাই প্রথম কারো মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হলো।

যে জল্লাদ বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আরো ৫ আসামির ফাঁসি কার্যকর করে সেই জল্লাদের নেতৃত্বেই ১০ সদস্যের দল মাজেদকে ফাঁসিতে ঝুলায়। এ সময় কারা কর্তৃপক্ষ ছাড়াও ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা মামলায় অন্যতম আসামি এই মাজেদ। মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে এরআগে ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। একজন বিদেশে পলাতক অবস্থায় মারা যান। এখনও বিদেশে পালিয়ে আছে আবদুর রশিদ, ডালিমসহ ৫ আসামি।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই বিদেশে পালিয়ে যায় আবদুল মাজেদ। অনেকটা হঠাৎ করেই গত ৭ এপ্রিল ঢাকার মিরপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে হাজির করার পর রাষ্ট্রপক্ষ জানায় খুনি মাজেদ দীর্ঘ ২৪ বছর ভারতে পালিয়ে ছিল।

৮ এপ্রিল আসামি আবদুল মাজেদের উপস্থিতিতে বিচারিক আদালত ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এম হেলাল উদ্দিন চৌধুরী তার মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। পলাতক আসামি হওয়ায় অপিলের সুযোগ না থাকায় ওইরাতেই কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। পরদিন সেই আবেদন খারিজ হয়ে গেলে রায় কার্যকরের সব বাধা কেটে যায়।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ওই বছর ২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহকারী মোহিতুল ইসলাম নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে সংসদের দায়মুক্তির আইনের কারণে মামলার কার্যক্রম ডিপ ফ্রিজে চলে যায়। দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালে দায়মুক্তি আইন বাতিল করলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের বাধা কেটে যায়। পরের বছর ১৯৯৭ সালে সিআইডি এই মামলায় ২০ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। শুরু হয় বিচার কাজ। ১৯৯৭ সালের ১৯ জুন পর্যন্ত বিচারক বিব্রত হওয়াসহ নানা কারণে আটবার বিচার কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। এভাবে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার রায়ে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন।

পরে উচ্চ আদালতে মামলা দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে ১২ আসামির ফাঁসির রায় বহাল থাকে। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচার কাজ বন্ধ থাকে। দীর্ঘ ছয় বছর পর ২০০৭ সালে রাষ্ট্রপক্ষের মুখ্য আইনজীবী বর্তমান সরকারের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টে সংক্ষিপ্ত বিবৃতি প্রদান করেন এবং ২৩ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের তিন সদস্যের একটি বেঞ্চ ২৭ দিনের শুনানি শেষে পাঁচ আসামিকে নিয়মিত আপিল করার অনুমতিদানের লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উচ্চ আদালতের দেয়া রায় বহাল রেখে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ আসামির দায়ের করা আপিল আবেদন খারিজ করা হয়। পরে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের রিভিউ খারিজ হলে ২৮ জানুয়ারি ওই মামলার ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। সর্বশেষ আবদুল মাজেদের রায় কার্যকরের মাধ্যমে মোট ৬ জনের ফাসির রায় কার্যকর হলো।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০