Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:19 am

খুলনার বেহাল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসা সরঞ্জাম বিকল অথবা সচল থাকলেও টেকনিশিয়ান ও চিকিৎসক স্বল্পতা এবং অ্যাম্বুলেন্স সংকট থাকায় খুলনার ৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স স্বাস্থ্যসেবায় প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছে না। এ সুযোগে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বাণিজ্য জমে উঠেছে।

শুক্রবার শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত খবরে আরও বলা হয়েছে, সিভিল সার্জন অফিসের আওতাধীন সব হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বর্তমানে কর্মকর্তা, কর্মচারী মিলিয়ে ৫৮৭টি পদ শূন্য। জনবলসহ জেলার স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিত্র সংবলিত প্রতিবেদন প্রতি মাসেই স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়।

সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর জনবল সংকটসহ নানা সীমাবদ্ধতায় চিকিৎসা না পেলে সাধারণ মানুষের ভরসা কোথায়? এক-দুটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এমন অবস্থা হলে পার্শ্ববর্তী প্রতিষ্ঠান থেকে চিকিৎসক এনে সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু  জেলার সব স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানই বেহাল, এতে তো চিকিৎসাব্যবস্থাই ভেঙে পড়ার উপক্রম। এটি কোনোভাবেই বেশিদিন চলতে পারে না।

খুলনার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো এখন ভবনসর্বস্ব। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নেই; যন্ত্রপাতি নেই। যন্ত্রপাতি থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। অ্যাম্বুলেন্স আছে তো চালক নেই। চালক থাকলে অ্যাম্বুলেন্স নেই। মানে, একটি থাকলে অন্যটি নেই।

সিভিল সার্জন জনবল সংকটের কথা জানিয়ে প্রতিমাসেই প্রতিবেদন পাঠান মন্ত্রণালয়ে। এটি রুটিন ওয়ার্ক। এর বাইরেও তিনি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পারেন। হয়তো করেছেনও। বর্তমান অবস্থায় এ প্রক্রিয়া জোরদার করতে হবে। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতাও চাইতে পারেন তিনি।

পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত কর্মরতদের উপস্থিতি এবং নির্দিষ্ট সময় কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করে, কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অফিস সময়ে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করে হলেও সেবা অব্যাহত রাখতে হবে। আশপাশের জেলাগুলোর কোনো প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চিকিৎসক থাকলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তাদের বেহাল প্রতিষ্ঠানগুলোয় নিয়োগ দিয়ে সংকট মোকাবিলা করা যেতে পারে।

খুলনার সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাবদ্ধতার সুযোগে গড়ে ওঠা বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসকরাও হয়তো কাজ করছেন। শৃঙ্খলা ও নৈতিকতাবোধের পরিচয় দিয়ে তারা এখন কর্মস্থলে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করবেন, বাণিজ্যিক মনোভাব পরিহার করবেন, এটিও কাম্য।

চিকিৎসকদের ইউনিয়ন স্থাস্থ্যকেন্দ্রে কমপক্ষে দুই বছর কাজ করতে হবে, এ মর্মে পাস করা আইন খুলনার ওই চিকিৎসকরা পরিপালন করেছেন কি না, তাও খতিয়ে দেখা যেতে পারে। অবশ্য উপজেলা শহরে ইউএনওসহ কয়েকজন প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা থাকেন। চিকিৎসকরাও তাহলে থাকতে পারবেন। এখন উপজেলা শহরগুলোয় মানসম্মত জীবন ধারণের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী একবার জাতীয় সংসদে বলেছেন, ‘থানা ও উপজেলা পর্যায়ে যেসব ডাক্তার থাকেন, তারা ঠিকমতো কাজ করেন কি না, তা দেখার দায়িত্ব স্থানীয় সংসদ সদস্যদের। এ বিষয়ে সংসদ সদস্যদের চিঠি  দেওয়া হয়েছে। আমরা ডাক্তার পাঠাব। কিন্তু ডাক্তারদের রাখার দায়িত্ব সংসদ সদস্যদের।’ এ অবস্থায় খুলনার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় দায় প্রকারান্তরে সংসদ সদস্যদের নিতে হবে।

চিকিৎসা খাতে দুরবস্থার কারণে সামর্থ্যবানরা ছোটখাটো চিকিৎসার জন্যও বিদেশ চলে যায়। সাধারণ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এটি মনে রেখেও সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।