Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:15 pm

খুলনায় অধিকাংশ স্কুলে হয় না মাল্টিমিডিয়া ক্লাস

শুভ্র শচীন, খুলনা: প্রত্যেকটি স্কুলে প্রতিদিন কমপক্ষে দুটি ক্লাস মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে নিয়ে শিক্ষা অফিসের ওয়েবসাইটে প্রতিবেদন পাঠানোর বিধান রয়েছে। অথচ খুলনার ৯০ শতাংশ স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হয় না। শহরের স্কুলগুলোতে মাঝে মাঝে কিছু ক্লাস হলেও গ্রামাঞ্চলের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক।

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার জানান, যেভাবে রিপোর্ট পাঠানো হয় সেভাবে কেউ ক্লাস নিতে পারেন না। আমরাও পারি না। তবে আমাদের এখানে কয়েকটা বিষয়ে মাঝেমধ্যে ক্লাস হয়। তিনজন শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ে তারাই মাঝে মাঝে ক্লাস নেন। উপজেলার আমাদি জাগিরমল তাকিমউদ্দিন সেকেন্ডারি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক উৎপল কুমার সানা, হারিতয়ারডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকাশ বরণ সরকার ও বেদকাশী কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল মজিদ জানান, স্কুলে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নেই। সরকার যখন এগুলো বিতরণ করেছিল, তখন স্কুলে বিদ্যুৎ না থাকায় তারা পাননি। তাই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হয় না।

দাকোপ উপজেলার আবুল হোসেন গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তিš§য় কুমার বিশ্বাস, আমতলা বানিশান্তা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার হালদার ও বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অসিত কুমার মণ্ডল জানান, তাদের কোনো স্কুলে ল্যাপটপ ভালো নেই। নিজস্ব ল্যাপটপে বিভিন্ন সময়ে ক্লাস নেন কোনো কোনো শিক্ষক।

রূপসা উপজেলার প্রায় সব স্কুলের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নষ্ট, শুধু বেলফুলিয়া ইসলামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ব্যক্তিগতভাবে দুটি প্রজেক্টর কিনে নিলেও বেশিরভাগ স্কুলেই মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয় না। জেবিএম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল্লাহেল বাকী জানান, ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর অনেক আগেই নষ্ট হয়েছে, তাই ক্লাসও নিতে পারি না। রিপোর্টও পাঠানো হয় না। একই হাল দিঘলিয়ার এপেক্স গার্লস স্কুল, বারাকপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হাজী ইসমাইল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও স্টার জুট মিলস্ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।

তেরখাদার এএফএম আবদুল জলিল হাই স্কুল, কুশলা হাই স্কুল ও বিআরবি হাইস্কুলের ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নষ্ট। ক্লাস হয় না মাল্টিমিডিয়া। পাইকগাছার সব স্কুলে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর ব্যবহার-অনুপযোগী। উপজেলার বিকেএএসএম ইনস্টিটিউশন, কুমখালি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাইকগাছা ভিলেজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এ চিত্র।

ডুমুরিয়ার মিকশিমিল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিরুল ইসলাম হালদার, ডুমুরিয়া গভার্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও চুকনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিনাথ কুণ্ডু জানালেন, ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্লাস নিতে পারছেন না।

মহানগরীর সরকারি জিলা স্কুল, করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস হয়। জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক আরিফুল ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম মেনে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। সরকারি ল্যাপটপের পাশাপাশি শিক্ষকদের ব্যক্তিগত ল্যাপটপও ব্যবহার করা হয়।

তবে নগরীর কয়েকটি স্কুলের একাধিক সহকারী শিক্ষক অভিযোগ করেন, বরাদ্দ পাওয়া সরকারি ল্যাপটপ স্কুল সময়ের বাইরে হেডস্যাররা বাড়িতে নিয়ে যান। অনেক সময় তাদের ছেলেমেয়েরা এগুলোতে ভিডিওগেম খেলে নষ্ট করে। এসব বিষয়ে মুখ খোলেন না কেউ।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার খোন্দকার মো. রুহুল আমিন জানান, প্রতিটি স্কুলে অন্তত দুটি করে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার কথা। কোনো সমস্যা হলে সরকারিভাবে না হলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ল্যাপটপ ও প্রজেক্টর মেরামত করে ক্লাস পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। ক্লাস না করিয়ে রিপোর্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।