খুলনায় কমেছে চালের দাম

শুভ্র শচীন, খুলনা: খুলনার বাজারে অবশেষে চালের দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দুই দিন ধরে মোকাম ও পাইকারি বাজারের পর খুচরা বাজারেও চালের দাম কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি চাল এক থেকে আট টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারত থেকে চাল আমদানি ও মিল মালিকরা চালের দাম কমানোর ফলে বাজারে চালের দাম কমছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার বিভাগের সবচেয়ে বড় বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই দিন আগে বালাম-২৮ বিক্রি হয়েছে ৫৬ টাকায়, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকায়। বাসমতি ৬৮ থেকে কমে ৬৪ টাকায়, মিনিকেট ৬২ থেকে কমে ৫৮ টাকায়, আতপ ৩৭ থেকে কমে ৩৪ টাকায়, এলসি বালাম ৫০ থেকে কমে ৪২ টাকায়, এলসি স্বর্ণা ৪৯ থেকে ৪১ টাকায়, এলসি মিনিকেট ৬০ থেকে ৫৪ টাকায়, নাজিরশাইল ৬৭ থেকে ৬৬ টাকায় এবং ভাইটাল মোটা ৬৩ থেকে কমে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বড় বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী এনসিডি বাণিজ্য ভাণ্ডারের মালিক মধুসূদন দাশ জানান, খুলনার সব মোকামে বেড়েছে ভারতীয় চালের উপস্থিতি। ভারত থেকে আসা চালের মধ্যে রয়েছে স্বর্ণা, মিনিকেট ও বালাম-২৮, যার প্রভাবে বাজারে চালের দাম কমতে শুরু করেছে। কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করে শহীদ নামের এক ক্রেতা বলেন, পরশ বালাম এক সপ্তাহ আগে ৬০ টাকায় কিনেছি, তা এখন ৫২ টাকা হয়েছে। চালের দাম কমায় সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তিতে আছেন।

ফারুখ হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় খুবই চিন্তায় ছিলাম, এখন দাম কমায় কিছুটা হলেও চিন্তামুক্ত হওয়া যাচ্ছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন জানান, সরকার চালের দাম কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। চালের কৃত্রিম সংকট নিরসন করতে মিল মালিকদের পাঁচ দফা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধান ও চাল ক্রয়-বিক্রয়ের রশিদ সংরক্ষণ ও প্রতিমাসের ১৩ ও ২৮ তারিখে সর্বশেষ মজুদের পরিমাণ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দফতরকে জানাতে বলা হয়েছে।

হাওর অঞ্চলে বন্যায় ফসলহানি ও রোহিঙ্গা ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে যারা ফায়দা লুটতে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়েছিল, তাদের এখন মাথায় হাত। সরকারের গৃহীত পদক্ষেপে চালের মূল্য কমায় এসব অসাধু ব্যবসায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ মাসের শেষ দিক থেকে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানির পরিমাণ বাড়বে। সেইসঙ্গে থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আসবে। তখন বাজারে সংকট থাকবে না। ফলে আগামী মাসের মাঝামাঝি নাগাদ চালের মূল্য স্থিতিশীল হবে। জেলার দুটি কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম ও আটটি উপজেলা পর্যায়ের গুদামে ১০ হাজার ৭১২ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে বলে জানা যায়। তাছাড়া সেপ্টেম্বর থেকে নগরীর ২০টি পয়েন্টে ওএমএস পদ্ধতিতে চাল বিক্রি শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচি চলবে আগামী রোববার পর্যন্ত। এ সময়ে ৫২০ মেট্রিক টন চাল বিক্রি হবে। থাইল্যান্ড থেকে এ মাসে ২৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল নিয়ে দুটি জাহাজ মোংলা বন্দরে ভিড়বে। আমদানি করা চাল বরিশাল ও বন্যাকবলিত এলাকায় পাঠানো হবে।

কৃষিসংশ্লিষ্ট দফতরের সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে প্রতি মণ ধানের উৎপাদন খরচ ৮৭০ টাকা। প্রতি কেজি মোটা চালের উৎপাদন খরচ ৩৭ দশমিক ৮৭ টাকা। জেলা বাজার কর্মকর্তা আবদুস সালাম তালুকদারের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে মোটা চাল কেজিপ্রতি ৩০-৩৩ টাকা, চিকন ৪৩-৪৫ টাকা, ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে মোটা ৩০-৩২, চিকন ৪৪-৪৬, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মোটা ২৭-৩৩, চিকন ৪২-৪৪, ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে মোটা ৩৪-৩৫, চিকন ৪৪-৪৬, এ বছরের আমন মৌসুমের প্রথমে মোটা ৩৬-৩৭, চিকন ৪৮-৫০, এ বছরের বোরো মৌসুমের প্রথমে মে মাসে মোটা ৩৮-৪০, চিকন ৫২-৫৪ এবং বুধবার মোটা ৪২-৪৪ ও চিকন ৬০-৬৪ টাকা দরে বিক্রি করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০