শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্রের জলরাশির উচ্চতাও। এতে উপকূলবর্তী এলাকায় বৃদ্ধি পাচ্ছে লবণাক্ততা। এ প্রেক্ষাপটে নানামুখী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন উপকূলের জনপদ। দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনাও এর বাইরে নয়। এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট দীর্ঘদিনের। বিশেষ করে সিটিসহ তিন উপজেলায় রয়েছে এর তীব্র সংকট।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্প: খুলনা নগরীতে পানির ঘাটতি পূরণে উদ্যোগ’ শিরোনামে খবর প্রকাশ হয়। বলা হয়, খুলনা ওয়াসা নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে বাস্তবায়ন করছে ওয়াটার সাপ্লাই প্রকল্প। এর প্রায় ৫২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। এতে নগরবাসী লবণাক্ত পানি থেকে মুক্তি পাবে বলে ধারণা।
উল্লেখ্য, খুলনা সিটিতে ১৫ লাখ মানুষের দৈনিক পানির চাহিদা ২৪ কোটি লিটার। সেখানে খুলনা ওয়াসা ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে উত্তোলন করে ১১ কোটি লিটার সরবরাহে সক্ষম, যা চাহিদার অনেক কম। খুলনা সিটিতে ওয়াসা পানি সরবরাহ করলেও পাইকগাছা, কয়রার মতো এলাকায় সুপেয় পানির সংকট আরও তীব্র। ওইসব উপজেলার মানুষের কাছে ওয়াসার পানি পৌঁছে না। তারাই সবচেয়ে বেশি সুপেয় পানির সংকটে ভোগেন। সাধারণত পুকুর বা জলাশয় থেকে তারা খাওয়ার পানি সংগ্রহ করে থাকেন। নলকূপ থেকে যে পানি পাওয়া যায়, তা-ও খাওয়ার উপযোগী নয়। ওইসব অঞ্চলের ধনীরা বাসার ছাদে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে বছর পার করেন। এজন্য তাদেরও বৃষ্টির অপেক্ষা করতে হয়। অতিরিক্ত লবণাক্ত ও আর্সেনিকযুক্ত পানি পানে বিভিন্ন ধরনের অসুখও হচ্ছে অনেকের। ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করছে, তার মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ পানি লবণ ও আর্সেনিকমুক্ত নয় বলে ওই অঞ্চলের অনেকের দাবি।
অবশ্য মধুমতি নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে ৩৩ কিলোমিটার দূরে এনে পরিশোধনের পাশাপাশি অপরিশোধিত পানি সংরক্ষণের জন্য জলাধার নির্মাণ হচ্ছে এটা নিশ্চয়ই এলাকার জনসাধারণের জন্য আনন্দের। এ প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা সিটির পানি সমস্যার সমাধান হলেও সিটির বাইরে যেসব এলাকায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে, তা পূরণে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এ প্রকল্প ছাড়াও সাধারণ মানুষের জন্য বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ অঞ্চলে অপরিকল্পিতভাবে অনেক চিংড়িঘের গড়ে তোলা হয়েছে, যার কারণে পানির জলাধার কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। সুপেয় পানির জলাধার সংরক্ষণের উদ্যোগের পাশাপাশি পানি সংকট পূরণে সরকার গুরুত্ব দেবে বলে আশা রাখি। পানির সংকট পূরণে বেসরকারি উদ্যোগও নেওয়া যেতে পারে। খুলনা সিটির পানির সংকট দূর করতে যে প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে এটাই কাম্য।