Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:14 am

খেলাপি ঋণ আদায়ে এডিআর কার্যকর ভ‚মিকা রাখুক

 

দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণে নাজুক পরিস্থিতি। খেলাপি ঋণ বাড়লেও আদায় বাড়ছে না। অর্থঋণ আদালতে মামলা করেও আদায় হচ্ছে না খেলাপি ঋণের অর্থ। বরং অর্থঋণ আদালতে খেলাপি ঋণের মামলার স্ত‚প হচ্ছে। কিন্তু নানা কারণে এসব মামলা নিষ্পত্তিও হচ্ছে কম। আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) ব্যবস্থায়ও মামলা নিষ্পত্তিতে কাক্সিক্ষত গতি নেই। আবার যেসব মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, সেগুলোর বিপরীতে আদায়ের হারও নগণ্য। তাই এই এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি বাড়াতে খেলাপি গ্রাহকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার আগে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা ও সদিচ্ছা বিবেচনায় গ্রাহক বরাবর পাওনা অর্থ পরিশোধের নোটিশ ইস্যু করার সময় ব্যাংক কর্তৃক এডিআর পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করাসহ ব্যাংকার্স সভায় তিন সুপারিশ করা হয়েছে। তবে গ্রাহকের অনাগ্রহে বা অন্য কোনো কারণে এডিআর পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তি সম্ভব না হলে ব্যাংক পাওনা অর্থ আদায়ে যথারীতি আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে।

এডিআরের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমানোর উদ্যোগ প্রথম নেয়া হয়েছে ২০১৯ সালে। ওই সময়ও এ উদ্যোগ সফল হয়নি। অর্থ আদায়ে অভিজ্ঞতার অভাব, বিশ্বাসযোগ্যতার ঘাটতিসহ নানা কারণে মামলার বাইরে সমঝোতার এ পদ্ধতিতে অর্থ আদায়ে ব্যাংক বা গ্রাহকের আগ্রহ কম। আমাদের খেলাপিদের বেশিরভাগই ইচ্ছাকৃত খেলাপি। তারা চান আদালতের মাধ্যমে অর্থ আদায় প্রক্রিয়া যত দীর্ঘ করা যায়। তারা নিশ্চয়ই এডিআরে অস্বস্তিবোধ করবেন।

আসলে ঋণ আদায়ে প্রত্যেক অংশীজনের দায়িত্ব রয়েছে। ব্যাংকও জেনেশুনে নানা উপায়ে খেলাপি ঋণ কম দেখিয়ে থাকে। দেখা গেছে, ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন চ‚ড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে এখন নতুন করে অনেক খেলাপি ঋণের তথ্য আড়ালের ঘটনা ধরা পড়ছে। আবার এ দৃষ্টান্তও আছে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে অনাদায়ী হলেও কিছু ঋণ খেলাপি দেখানো যাচ্ছে না।

দেশে দেশে মামলাজট ও অপরাধ কমাতে একটি স্বীকৃত সহায়ক পদ্ধতি। তবে এডিআর নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এটি আমাদের দেশে আদৌ প্রত্যাশিত পর্যায়ে যেতে পারেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অনেক দেশই হয়তো এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে সফল হয়েছে। আমাদের কেন হচ্ছে না, সেটির একটি বড় কারণ মানুষের মামলার প্রতি আগ্রহ বেশি। এমন অনেকে আছেন মামলায় কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ খরচ করবেন, তবু ঋণ পরিশোধ করবেন না। কেউ যদি স্থির সিদ্ধান্ত নেয় যে ঋণ পরিশোধ করবেনই না, তাকে কীভাবে এডিআরে ঋণ পরিশোধে সম্মত করাবে! আসলে মানসিকতার পরিবির্তন এবং আইনের শাসস প্রতিষ্ঠা ব্যতিরেকে এ ব্যবস্থা সুফল বয়ে আনবে না। বরং কালক্ষেপণে সুষ্ঠু বিচার না হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

কোনো মামলা এডিআরের মাধ্যমে নিষ্পত্তি না হলে মামলাটি আদালতে চলে যায়। এডিআরে সমঝোতার মাধ্যমে হোক কিংবা আদালতে বিচারের মাধ্যমে হোক, কোনো খেলাপি ঋণ যেন অনাদায়ী না থাকে। প্রয়োজনে কঠোর হলেও তা আদায় করতে হবে শূন্য সহশীলতায়, নইলে ব্যাংক খাতে আস্থার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হবে।