Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 12:24 pm

খেলাপি ঋণ কমাতে আইনি সংস্কারের তাগিদ আইএমএফের

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রণহীন খেলাপি ঋণ কমাতে আইনি সংস্কারের তাগিদ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এছাড়া ব্যাংক খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিরোধে সুশাসন, জবাবদিহিতা, অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (বাংলাদেশ ব্যাংক) আরও শক্ত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছে আইএমএফ।

বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্য রক্ষায় আইএমএফ ২০১১ সালে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে মোট ৯৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার দেয়। এ ঋণ কর্মসূচির সফল সমাপ্ত হয়েছে সম্প্রতি। ওই কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছিল সংস্থাটি। সেসব শর্ত যাচাইয়ে দায়শাকু কিহারার নেতৃত্বে একটি টিম বাংলাদেশ সফর করেছে। আট দিনের সফর শেষে তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

এ সময় বাংলাদেশের ব্যাংক খাত ও অর্থনীতির বিভিন্ন দিক নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব দেয় সংস্থাটি। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত দায়শাকু কিহারার নেতৃত্বে আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে বৈঠক করে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সংস্থাটি জানায়, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এ সমস্যা দূর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ব্যাংকের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও করপোরেট গভর্নেন্সের উন্নয়ন করতে হবে। এছাড়া ব্যাংক খাতের বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ কমাতে আইনি সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করে সংস্থাটি।

আইএমএফের ইসিএফ ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা। সেটি দুবছর পিছিয়ে যাওয়াকে তিনি কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে দায়শাকু কিহারা বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এখানকার কর জিডিপি রেশিও অনেক কম। নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য কমবে। তবে ইসিএফের সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় এক্ষেত্রে কোনো প্রভাব নেই বলে তিনি জানান।

দায়শাকু কিহারা বলেন, ব্যাংক খাত ও পুঁজিবাজার উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে আরও সুসংহত করতে হবে। দেশের বেশ কয়েকটি ব্যাংক বিশেষত রাষ্ট্রীয় মালিকানার কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ও উচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে। এটা কমানোর জন্য কাজ করতে হবে।

ওভার ইনভয়েচিংয়ের মাধ্যমে বিদেশে বিপুল অংকের অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অর্থ পাচার নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ রয়েছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সম্প্রদায় বাংলাদেশের বাজেটের ওপর এক ধরনের চাপ তৈরি করেছে। এ চাপ প্রশমনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে।

প্রতিনিধিদলের প্রধান বলেন, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের চাহিদা ও বিনিয়োগের ওপর ভিত্তি করে দৃঢ় জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন হচ্ছে। ফলে এখানকার জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকবে। তবে প্রকৃতপক্ষে এবার বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কত শতাংশ অর্জিত হবে, সে বিষয়ে এখনও আইএমএফের প্রাক্কলন চূড়ান্ত হয়নি। বর্তমানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেশি থাকলেও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ফলে এখানে উদ্বেগের কিছু নেই।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক অব্যাহতভাবে ডলার সহায়তা দিচ্ছে। এতে করে এখানকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাপে পড়বে কি নাÑএরকম প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আমদানি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পে ব্যবহƒত কাঁচামাল। এর প্রভাবে সামনের দিনে রফতানি বৃদ্ধি পাবে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।

নতুন ৯ ব্যাংক নিয়ে নানা অস্থিরতার মধ্যে নতুন করে আরও কয়েকটি ব্যাংক দেওয়ার বিষয়ে সরকারি উদ্যোগকে আইএমএফ কীভাবে দেখছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন ব্যাংক দেওয়া-না দেওয়া সরকারের নীতিগত বিষয়। তবে সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে সমানভাবে আইন বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে হবে। বাংলাদেশের যেসব আইন রয়েছে, তা যেন যথাযথভাবে পরিপালন করে ব্যাংক দেয়া হয়, সে বিষয়ে জোর দিতে হবে।