খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারই এখন বড় কাজ

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

 

বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো, কিন্তু ব্যাংকগুলোর অবস্থা ভালো নয়। তাই সম্প্রতি যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটি বেশ সময়োপযোগী। আশা করা যায়, এই মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে আগামী ছয় মাসে ব্যাংক বা অর্থনীতি ভালোর দিকে যাবে। তবে সব থেকে বড় কথা, আমাদের এখন খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করতে হবে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। ড. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ এবং পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহম্মদ মুসা।

কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ বলেন, ব্যাংকের দিকে থেকে বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ১৬ দশমিক তিন থেকে ১৬ দশমিক আট শতাংশ দেখানো হয়েছে। তবে সব থেকে বড় কথা, আমাদের এখন খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার করতে হবে। গত মঙ্গলবারও ব্যাংকের এমডিদের ডেকে এ কথা বলা হয়েছে। বেসরকারি খাতের প্রবৃদ্ধি ভালো, কিন্তু ব্যাংকগুলোর  অবস্থা ভালো নয়। ফলে এখন যে মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়েছে সেটি বেশ সময়োপযোগী। আমরা আশা করি, এই মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে আগামী ছয় মাসে ব্যাংক বা অর্থনীতি ভালোর দিকে যাবে। তাছাড়া বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার এক অঙ্কে নেমে এসেছে। আমি যখন এফবিসিসিআইতে প্রেসিডেন্ট ছিলাম তখন থেকেই এটি নিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। তখন সবাই আমাকে বলতেন, আপনি তো ব্যাংকার, আপনিই বলেন এক অঙ্কে দেবেন কি না? আমি বললাম, একা তো দেওয়া সম্ভব নয়, তবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে যাতে বাজার এই পর্যায়ে আসে। চূড়ান্তভাবে এটি কোনো সরকার, ব্যক্তি বা কোনো ব্যাংকও করতে পারেনি। বাজারই এটি সৃষ্টি করেছে যাতে আমরা এক অঙ্কে যেতে পারি। তবে সম্প্রতি যে মুদ্রানীতি ঘোষণা হল তাতে এক অঙ্কে থাকা সম্ভব নয় এবং ডিপোজিটও নিতে হবে বেশি টাকায়। পাশাপাশি এখন এক অঙ্কে যদি আমাদের সুদের হার পুনর্বিবেচনা না করি তাহলে ব্যাংকগুলোর টিকে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়বে।

মোহম্মদ মুসা বলেন, আমরা সাধারণত পৃথক পৃথক উপাদানের চেয়ে যেটিকে খুব প্রভাবশালী ব্যাপার মনে করি, সেটি হচ্ছে, মোট অর্থ সরবরাহ অর্থনীতিতে কীভাবে আছে। অনেক সময় দেখা যায়, যদি একটি উপাদান বেড়ে যায় তাহলে আরেকটি উপাদান কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে  বেশি হয়েছে। লক্ষ করলে দেখবেন, ২০১৫-১৬ বা তার আগে বাংলাদেশের অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী বিদেশি ঋণের ওপর বেশি নির্ভর করতেন। এর একটি বড় কারণ ছিল, স্থানীয় ঋণের সুদহার ছিল গড়ে ১৩ থেকে ১৪ শতাংশ। আর বিদেশি ঋণের সুদের হার গড়ে পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের মতো। ফলে তখন তারা বৈদেশিক ঋণ বেশি নিত। কিন্তু একটি সময় ব্যাংক খাতে তারল্যের পরিমাণ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এক-দেড় বছর আগেও ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ তারল্য ছিল, কিন্তু ঋণ নেওয়ার কেউ ছিল না এবং তখন সুদের হার কমে গিয়েছিল। কিছু শিল্পপতির কাছে শোনা যায়, তারা দীর্ঘদিন আগের ঋণ এখন ফেরত দিতে চান, কারণ লোকাল ঋণ নিলে যে সুদ দিতে হয় এবং বিদেশি ঋণ নিলে যে সুদ দিতে হয়, তার ওপর যদি এক্সচেঞ্জ রেট ঝুঁকি যোগ করা হয় তাহলে বিদেশি ঋণে আর উৎসাহ থাকবে না। সেজন্য তারা নতুন করে ফরেন কারেন্সি লোন না নিয়ে লোকাল কারেন্সিতে লোন নিতে আগ্রহী। আর দেশের বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাড়ার এটি একটি বড় কারণ হতে পারে।

 

শ্রুতি লিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০